বর্তমান বাজারে চাকরি যেন সোনার হরিণ। ছাত্র জীবন শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য মহা টেনশন। এদিকে ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত আর বিরক্ত। চাকরি পাওয়ার জন্য কত যে প্রস্তুতি, কত আয়োজন তার কোন শেষ নেই। আজ পাঠকদের জন্য রয়েছে ইন্টারভিয়ের সাতকাহন।
ভূমিকা
পড়াশুনা শেষ করে বাড়ীতে বসে আছেন বেকার অবস্থায়। চাকরি পাওয়ার জন্য দিয়েছেন অনেক ইন্টারভিউ কিন্তু সফল হতে পারছেন না কোনভাবেই। হয়তো বা ভালো ইন্টারভিউও দিয়েছেন কয়েক জায়গায় তবে ব্যর্থই হয়েছেন বারবার। আপনি হয়তো ভাবছেন “বৃথা এ চেষ্টা, শত চেষ্টা করেও যখন চাকরি জুটাতে পারিনি, আমি আর পারব না। জটিল, অসম্ভব জটিল, আমার দ্বারা সম্ভব হবে না কোন কাজই। আপনার এ নেতিবাচক চিন্তা খুবই অমূলক, ক্ষতিকর, খুবই ক্ষকিকর,। বর্তমান বাজারে চাকরি নামক সোনার হরিনটা অর্জন করা আসলেই অসাধ্য সাধনের নামান্তর। এ প্রসঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাসের কথা মনে পড়ে । তিনি বলেছিলেন “পৃথিবীতে বিশুদ্ধ কোন চাকরি নেই”। এ জন্য চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী, গতিশীল ও আত্মবিশ্বাসী। একবার হতাশ হয়ে পড়লে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে তীব্র প্রতিযোগীতামূলক এ বাজারে। ফলে দেখা যায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত চাকরি খুজেঁও থাকতে হচ্ছে বেকার। এ অবস্থা থেকে উঠে আসতে হলে চাকরি সন্ধানে নিজের উদ্যমকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। মাঝপথে হারিয়ে গেলে আপনি কখনো গন্তব্যে পৌছতে পারবেন না। কারণ মাথা ডুবিয়ে দিলে পানির উপর বেশিক্ষন ভেসে থাকা সম্ভব নয়। কাঙ্খিত চাকরি লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে চাকরি সন্ধানে লেগে থাকা এবং মটিভেট করা। কাজের চাকরির সন্ধানে কিভাবে মটিভেট থাকবেন? এ রচনায় থাকছে তারই বিস্তারিত
চাকরি সন্ধানকেও চাকরি মনে করুন
বেশির ভাগ মানুষ চাকরি সন্ধানকে একটি অবসর কর্ম হিসেবে নিয়ে থাকেন। সময়-সুযোগ হলে একটু সন্ধান করলেন, নয়তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলেন, এভাবে কি সম্ভব কোন ভালো চাকরি যোগানো? চাকরি খুঁজে বের করাও একটি অন্যতম চাকরি হিসেবে মনে করে আলাদাভাবে রুটিন ও বাজেট করে প্রচুর সময় দিতে হবে তার জন্য। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবারে চাকরির খবর, চাকরির বিজ্ঞাপন ইত্যাদি নামে অনেক পত্রিকা বের হয় যা আপনি পড়ে দেখবেন কোন চাকরিটা আপনার জন্য উপযুক্ত। তাছাড়া দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কিংবা অনলাইনে আপনি খুঁজতে পারেন চাকরির সন্ধান। অনলাইনে চাকরির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে এ রচনায়।
সু-নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন
আপনি কি ধরনের চাকরি করতে চান কিংবা কোন চাকরিটা আপনার ভালো লাগে, তা আগে-ভাগেই সিলেক্ট করুন এবং সেই অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হউন। আপনার যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষেত্রেই আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। স্থিরকৃত নির্দিষ্ট লক্ষ্য আপনার চাকরি সন্ধান প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেবে।
সুস্থ থাকুন
প্রতিযোগীতামূলক বাজারে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হলে সুস্থতা ও সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে আপনারকে। নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত পুষ্টিকারক খাবার গ্রহণের পাশাপাশি পরিমিত ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। চাকরি সন্ধানজনিত শারীরিক ও মানসিক চাপ কমানোর জন্য রপ্ত করে নিতে পারেন মেডিটেশন প্রক্রিয়া।
সহযোগী দল তৈরি করুন
যৌথপ্রয়াস সব সময় সাফল্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। একার পক্ষে যা সম্ভব নয়, সমবেত প্রচেষ্টায় তা হয়ে উঠে সহজ। আপনার পরিচিত বন্ধু যারা চাকরি খুঁজছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। যারা চাকরি করছেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখুন। পরস্পর সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করুন, আদান-প্রদান করুন চাকরি সংক্রান্ত তথ্যাবলীর। প্রভাবশালী কেউ যদি আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম বলে মনে করেন, তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন, তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিত। মনে রাখবেন, চাকরির সুযোগের একটি বিরাট অংশ পূরণ হয় যোগাযোগের মাধ্যমে।
অধ্যবসায়ী হউন
আত্মবিশ্বাসের সাথে অধ্যাবসায় করলে পৃথিবীর অনেক আসাধ্যকে সাধন, অনিয়মকে নিয়মের মধ্যে আনা যায়। সম্ভবত অধ্যাবসায়ের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ছিলেন আব্রাহাম লিংকন, যিনি দারিদ্র্যের মাঝে জন্মে জীবনের প্রতিটি ধাপে পরাজয়ের শিকার হয়েছিলেন। তিনি আটটি নির্বাচনে হেরে যান, দুইবার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ হন, এমনকি এক স্নায়ুবিক বৈকাল্যে ভুগেছিলেন বহুদিন পর্যন্ত। সহজেই এসব ব্যর্থতায় তিনি থেমে যেতে পারতেন কিন্তু তিনি থেমে যাননি বরং তিনি প্রবল আগ্রহ ও সাধনার ফলে আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্র্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ অবধি বিবেচিত হয়ে রয়েছেন। টমাস আলভা এডিসন ২০ শতকের প্রতিভাধর ও জননন্দিত সেরা আবিস্কারক। যার স্মৃতি শক্তির স্বল্পতা ছিল সর্বজনবিদিত। কিন্তু অব্যাহত প্রচেষ্টা ও নিরন্তর সাধনার ফলেই বৈদ্যুতিক বাতি ও গ্রামোফোনসহ তিনি আবিস্কার করেন প্রায় ১২৫টি সামগ্রী।
ধৈর্য্য ধারণ করুন
চাকরি নামক সোনার হরিনটি হাতের মুঠোয় আনতে ধৈর্য্যধারণ অতীব প্রয়োজন। বিজ্ঞানী নিউটন ২০ বছর পরিশ্রম করে যে বইটি লিখেছিলেন তাঁর প্রিয় কুকুর একটি জ্বলন্ত বাতি ফেলে ঐ বইখানি মুহুর্তের মধ্যে ছাই করে ফেলল। সর্বনাশ হয়ে গেল ২০ বছরের অক্লান্ত সাধনা। কিন্তু কি আশ্চর্য সহিষ্ণুতা দেখালেন যে, তিনি দমলেন না। আবার সেই বই লেখা শুরু করলেন, আর সেটি পূনরায় লিখে স্থাপন করলেন অসাধারণ দৃষ্টান্ত।
নিয়মিত পড়াশুনা করুন
পড়াশুনা না করে চাকরি পাওয়াটা যে বেশ কঠিন। যে বিষয়ে আপনি চাকরি করতে চান সে বিষয়ে প্রচুর অধ্যায়ন করুন, চালিয়ে যান নিয়মিত পড়ালেখা। ইংরেজি, বাংলা, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাধারণজ্ঞানসহ সাম্প্রতিক তথ্যাবলী আপনি ভালোভাবে পড়তে থাকুন। তাছাড়া রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে গরুত্বসহকারে। কম্পিউটারে দক্ষতা ও ইংরেজিতে কথাবার্তা বলা জানলে চাকরি পেতে মোটেই বেগ পেতে হবে না আপনাকে। চাকরি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা যেমন- কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ড, কারেন্ট নিউজ ইত্যাদি ভালভাবে চর্চা করুন আর প্রতিটি ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করুন। এক সময় দেখবেন আপনার উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেছে।
ইন্টারভিউকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করুন
জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছেন, অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন, হাজার মার্কসের পরীক্ষাও দিয়েছেন। কিন্তু ইন্টারভিউ হলো এ সকল কিছুর চেয়ে আরো বৈচিত্র্য ও কঠিন প্রক্রিয়া। এখানে ১০টি পোষ্টের অধীনে ৫০ হাজার প্রার্থী থাকতে পারে। মেধাভিত্তিক তালিকার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়ে থাকে এখানে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, আপনার জন্য এটা কত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ! বিধায় হাজার প্রার্থীদের মধ্যে আপনাকে আলাদাভাবে উপস্থাপন না করলে কিভাবে মেধা তালিকায় আপনার নাম তালিকাভুক্ত হতে পারে তা অতি সহজেই অনুমেয়।
আলোচনার উপান্তে এসে স্মরণ করিয়ে দেই বিশ্ববিখ্যাত সেই সফল ব্যক্তির কথা যিনি তাঁর সফল হওয়ার রহস্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁর সাফল্যের মূল মন্ত্র ছিল- “আত্মবিশ্বাসের সাথে লেগে থাকা, লেগে থাকা এবং লেগে থাকা।”
কাক ও পেঁচার উলুক যাদু সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিজিট করুন
আপনি যদি নিজেকে অবহেলা করেন, নিজের সম্বন্ধে সন্ধিহান হয়ে পড়েন, অহেতুক সময় নষ্ট করেন, বলুন তাহলে কিভাবে আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারবেন? কাজেই চাকরি পাওয়ার সংগ্রামে আজই লেগে পড়ুর কোমর বেঁধে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে। চাকরি নিয়োগ কিংবা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন চাকরি প্রার্থীকে নিয়োগ লাভের জন্য লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষাতেই অংশগ্রহন করতে হয়। প্রাথমিকভাবে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করলেও নিয়োগ প্রাপ্তির বিষয়টি চুড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয় মৌখিক পরীক্ষা তথা ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজেকে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বারোপ করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার বেশ কিছু টিপস বা ধারণা দেয়া হল এই প্রবন্ধে যা আপনাকে ইন্টাভিউতে ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়তা করবে।
লিখিত পরীক্ষার জন্য এক ডজন টিপস
১. বানান ভুল বা বাক্যগঠনে ভুল করা চলবে না। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রন যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
২. অনুমানের উপর উত্তর লিখবেন না ।
৩. ধারণা কিংবা উপর উপর আলোচনা নয় বরং বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করুন।
৪. যথাযথ তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে জানান আপনার বক্তব্য।
৫. অল্প শব্দ প্রয়োগ করে নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করে বুঝাতে চেষ্ঠা করুন।
৬. খুব জটিল বাক্যে নয়, উত্তর দিন ছোট ছোট সরল বাক্যে।
৭. সব কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করুন। উত্তর বড় হলে অনুচ্ছেদ ভাগ করে লিখুন।
৮. অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে চলুন।
৯. অনুমোদন থাকলেই শুধুমাত্র ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন।
১০. পয়েন্ট আকারে সুন্দর সূচনা ও ভূমিকা দিয়ে রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর লিখুন।
১১. যে জায়গায় মত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে বাস্তবতার সংগে মিল রেখে আপনার মতামত দিন।
১২. গতানুগতিক উত্তর না দিয়ে ভিন্নধর্মী উপস্থাপন করুন।
মৌখিক পরীক্ষার জন্য এক ডজন টিপস
১. পরিষ্কার, মার্জিত ও রুচিসম্মত পোষাক পড়ুন।
২. চুলের স্টাইলটা মানানসই রাখার চেষ্ঠা করুন।
৩. ফাইলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিন আর সঙ্গে রাখুন একটি কলম। আবেদনপত্র, বায়োডাটার প্রতিলিপি, মার্কসীট প্রভৃতি কাগজপত্র নিতে ভুলবেন না।
৪. স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে নিজের অর্নাস ও মাস্টার্সের বিষয় সম্পর্কে।
৫. ইন্টারভিউ দিতে ঘরে ঢুকে দিনের সময় অনুসারে বোর্ডকে সম্বোধন করুন। বসতে বললে থ্যাঙ্কস জানিয়ে বসুন। বসতে না বললে একটু অপেক্ষা করুন। অনুমতি নিয়ে তবেই বসুন।
৬. নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলে সিভিতে যা লেখা আছে সংক্ষেপে তা বলুন। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানলে ভদ্রভাবে জানান যে, আপনি সেটা জানেন না। বানিয়ে বানিয়ে বলতে গেলে কিন্তু ভুলের আশংকা থেকেই যায়।
৭. ইন্টারভিউ বোর্ডে পরীক্ষক ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে উত্তর দিন ইংরেজিতেই। এজন্য প্রার্থীকে কিন্তু ইংরেজিতে ভাল দখল থাকতে হবে।
৮. ইন্টারভিউ বোর্ডে পরীক্ষকদের প্রশ্নের প্রতি মনোযোগ দিন। প্রতিটি প্রশ্ন ভাল করে শুনে ও বুঝে
উত্তর দিন। প্রথমবার না বুঝলে (please, sorry, Excuse me, pardon me) ইত্যাদি বলে নম্রভাবে আর একবার প্রশ্নটি করতে অনুরোধ করুন।
৯. প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ হলে চুপ করে না থেকে sorry বলুন এবং পজেটিভ উত্তর দেবার চেষ্ঠা করুন
১০. বোর্ডে সকল পরীক্ষককে সমভাবে গুরুত্ব দিন। যিনি প্রশ্ন করেন তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিন। উপর-নীচ কিংবা আড়াআড়িভাবে তাকিয়ে উত্তর দিবেন না।
১১. ইন্টারভিউ শেষে বোর্ডের সকলকে উইশ করে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে রেরুন।
১২. সর্বোপরি, ব্যক্তিত্বপূর্ণভাবে সঠিক তথ্য ও যুক্তিসহকারে ধীরস্থিরভাবে প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।