নারীদের গল্প লিখতে গিয়ে ইসলামের কতিপয় বিখ্যাত পূণ্যমতি নারীদের গল্প আলোচনা করার প্রয়াস চালাব। যারা ইসলামের ইতিহাসে জান্নাতি নারী হিসেবে খ্যাত। ইসলাম ধর্মে নারীদের গল্প জুড়ে এদেরই আলোচনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
১. মূসা (আ) এর বাহিনীর এক বৃদ্ধা
মিশর অধিপতি ফেরআউন খোদায়ী দাবী করল। যারা ফেরআউনকে থোদা বলে মেনে নিল তারা নিরাপদে রইল আর যারা তাকে খোদা মানল না তাদের উপর ফেরআউনের পক্ষ হতে শুরু হল অত্যাচার, নির্যাতন। ফলে খোদা বিশ্বাসী হযরত মূসা (আ) এর অনুসারীদের কষ্টের আর সীমা রইল না।
শেষে হযরত মূসা (আ) আল্লাহর কাছ থেকে আদেশ প্রাপ্ত হয়ে জালেম ফেরআউনের অত্যাচারের কবল থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে স্বীয় ভক্তদের নিয়ে দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। হযরত মূসা (আ) তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কাল বিলম্ব না করে অচেনা পথের যাত্রী হলেন। কিছু দূর গিয়ে সামনে বিশাল দরিয়া লোহিত সাগরের তীরে এসে উপনীত হলেন। এখন কিভাবে এই বিশাল দরিয়া পারি দিবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। এছাড়া পথ অগ্রসর হওয়ার জন্য আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না।
এক বৃদ্ধা হাজির হয়ে বলতে লাগল: হযরত ইউসুফ (আ) স্বীয় ইন্তেকালের সময় তাঁর বংশগণকে বলেছিলেন, যদি তোমরা কোনো সময় মিশর দেশ ত্যাগ করে যাও, তখন আমার কবরকেও তোমাদের সাথে নিয়ে যাবে। তা না হলে তোমরা সামনে অগ্রসর হওয়ার পথ খুঁজে পাবে না। হযরত মূসা (আ) বৃদ্ধাকে কবরের স্থান নির্দেশ করতে বললেন।
বৃদ্ধা বললেন, হে হযরত মূসা (আ)! আপনি আমার সাথে একটি বিষয়ে ওয়াদাবদ্ধ হলে আমি এই কবরের সন্ধান দিব। হযরত মূসা (আ) জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার কাছে কি ওয়াদা করতে হবে। বৃদ্ধা কাতর ভঙ্গিতে আরজ করলেন, আমার মৃত্যূ ঈমানের সাথে হউক আর বেহেস্তে আপনার নিকট আমার স্থান লাভ হউক।
এক কথা শুনে হযরত মূসা (আ) আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করলেন, হে আমার সৃষ্টিকর্তা মাবুদ, এই ব্যাপারে আমার তো কোনো কিছু করবার নাই।
আল্লাহর তরফ থেকে আশ্বাস বাণী আসল, হে মূসা! আপনি স্বীকার করুন আমি এটা পূর্ণ করব।
অত:পর হযরত মূসা (আ) মহিলাকে আশ্বাস বাণী জানিয়ে দিলেন। বৃদ্ধা সন্তুষ্ট হয়ে কবরের ঠিকানা বলে দিলেন। কবর বের করার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাও মিলে গেল। সোবহানাল্লাহ!
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
২. হাইসুরের বোন
পবিত্র কোরআন শরীফে হযরত মুসা (আ) ও হযরত খিযির (আ) এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এই কাহিনীতে উল্লেখ আছে, আল্লাহ তা’য়ালার হুকুমে খিযির (আ) এক ছোট শিশুকে মেরে ফেলেন। ছেলেটির নাম ছিল হাইসুর। হযরত মুসা (আ) পেরেশান হয়ে খিযির (আ) কে জিজ্ঞেস করলেন কি কারণে এই নিষ্পাপ শিশুকে আপনি মেরে ফেললেন? উত্তরে হযরত খিযির (আ) বললেন, এই শিশু বড় হলে কাফের হয়ে যেত। অথচ এর বাবা-মা উভয়ই ঈমানদার। ছেলেটি বেঁচে থাকলে ছেলের মহব্বতে পড়ে ঐ ঈমানদার মা-বাবাও কাফের হয়ে যাবার আশংকা ছিল। কাজেই ছেলেটিকে হত্যা করার মধ্যে মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
আল্লাহ তা’য়ালা এখন এই মা-বাবাকে একটি কন্যা সন্তান দান করবেন। সে হবে খুবই পাক-পবিত্র এবং বাবা-মায়ের জন্য মঙ্গলজনক।
এই মেয়ে সর্ম্পকে বিভিন্ন কিতাবে এসেছে যে, উক্ত মা-বাবার ঘরেই এক মেয়ের জন্ম হয়েছিল। তাঁর বিবাহ হয়েছিল এক পয়গাম্বরের সাথে এবং তাঁর বংশ থেকে জন্ম নেন ৭০ জন পয়গাম্বর । মেয়েটি বড়ই বুযুর্গ ছিলেন। কোরআন শরীফে তাঁর প্রসংশা করা হয়েছে। সোবহানাল্লাহ
৩. বাদশা নমরুদের কন্যা রাদ্বাহ
হযরত ইব্রাহিম (আ) কে যে পাষণ্ড নমরুদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেছিল, তার এক কন্যা ছিল, নাম তার রাদ্বাহ। ইব্রাহিম (আ) কে যখন বিরাট অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয় তখন হাজার হাজার লোক তা দেখার জন্য ভীড় জামালো। নমরুদের কন্যাও একটি উঁচু স্থানে বসে এ দৃশ্য দেখছিল। সে দেখল যে, ভীষণ অগ্নিকুণ্ডের লেলিহান অগ্নিশিখা হযরত ইব্রাহিম (আ) এর কেশাগ্রহ স্পর্শ করছে না। তৎক্ষণাৎ সে উচ্চ স্বরে চীৎকার করে জিজ্ঞেস করল, হে ইব্রাহিম! আগুন তোমাকে পোড়াচ্ছে না কেন? জবাবে খলীলুল্লাহ বললেন, ঈমানের বরকতেই আল্লাহপাক আমাকে এ ভীষণ অগ্নি থেকে রক্ষা করেছেন। তখন রাদ্বাহ বলল, আপনার অনুমতি পেলে আমি এক্ষুণি অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করব। ইব্রাহিম (আ) বললেন, তুমি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইব্রাহিমু খলীলুল্লাহ’ বলে আগুনে প্রবেশ করতে পার। তখন রাদ্বাহ এই কালিমা পাঠ করে আগুনে প্রবেশ করল। ফলে আগুন তাকে স্পর্শ করল না। এতে পাষণ্ড পিতা নমরুদ ক্ষিপ্ত হয়ে রাদ্বাহ এর উপর অকথ্য নির্যাতন চালাল। কিন্তু সকল নির্যাতন তার অটল ঈমানের মোকাবেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। নমরুদের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হল। সর্বোপরি সে তার আদরের মেয়েকেও হারাল। সুবহানাল্লাহ! কত বড় নির্ভীক আর সাহসী ছিল সেই মেয়েটি। অকথ্য নির্যাতন, অসহনীয় উৎপীড়ন সবকিছু পরাভূত হল তার দৃঢ় ঈমানের সামনে। আল্লাহ আমাদেরকে উত্তম ঈমান দান করুন। আমীন।
দ্রব্যগুণ ও টোটকা চিকিৎসা শিখতে ভিজিট করুন