থানকুনি পাতার উপকারিতা
আজকের আর্টিকেলে থানকুনি পাতার উপকারিতা নিয়ে থাকছে বিশদ আলোচনা। ঔষধি পাতাসমূহের মধ্যে ভেষজ শাস্ত্রে থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে রয়েছে বিশাল নাম ডাক। উইকিপিডিয়াতে এর বহু গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-
গুনাগুণ
- মুখে ঘা ও অন্যান্য ক্ষতে উপকারী।
- সর্দির জন্য উপকারী।
- পেটের অসুখে থানকুনির ব্যবহার আছে।
- আমাশয়ে ভাল কাজ করে।
- সাময়িকভাবে কাশি কমাতে সাহায্য করে।
- গলা ব্যথার জন্য উপকারি
থানকুনি পাতার উপকারিতা কেমন
থানকুনি পাতা আমাদের অতি পরিচিত একটি পাতা। পুকুরপাড় বা জলাশয়ে হর-হামেশাই দেখা মেলে এই পাতাটির। কথায় বলে, পেট ভালো থাকলে মনও ফুরফুরে থাকে। চিকিত্সকরাই বলছেন, থানকুনি পাতার এমন ভেষজ গুণ রয়েছে, যার রস নিয়মিত খেতে পারলে, পেটের অসুখে কখনো ভুগতে হবে না। শরীর-স্বাস্থ্য তো সতেজ থাকেই, ছোটবেলা থেকে খেতে পারলে বুদ্ধিরও বিকাশ হয়। নিচে পাঠকদের জন্য পয়েন্ট আকারে থানকুনি পাতার ভেষজ গুণাবলি দেয়া হল-
যৌবন ধরে রাখতে ও শরীর সুস্থ রাখতে থানকুনি পাতার ভেষজ গুণগুলি
১. পেটের রোগ নির্মূল করতে থানকুনির বিকল্প নেই। থানকুনি নিয়মিত খেলে যে কোনো পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পেট নিয়ে কোনো দিনও সমস্যায় ভুগতে হয় না।
বিখ্যাত ৩০টি ঘরোয়া যাদুর টেকনিক শিখতে ভিজিট করুন
২. শুধু পেটই নয়, আলসার, এগজিমা, হাঁপানিসহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় এই থানকুনি পাতা খেলে। ত্বকেও জেল্লা বাড়ে।
৩. থানকুনি পাতায় থাকে Bacoside A ও B. Bacoside B মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
৪. থানকুনি স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
৫. মৃতকোষের ফলে চামড়ায় অনেক সময়ই শুষ্ক ছাল ওঠে। চামড়া রুক্ষ হয়ে যায়। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলিকে পুনর্গঠন করে ত্বককে মসৃণ করে দেয়।
৬. যদি পুরনো কোনো ক্ষত বহু ওষুধেই না সারে, থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে তার জল লাগালে সেরে যায়। সদ্য ক্ষতে থানকুনি পাতা বেটে লাগালে, ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।
৭. থানকুনি পাতা চুল পড়া আটকে দেয়। এমনকি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
৮. বয়স বাড়লেও, যৌবন ধরে রেখে দেয় থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।
৯. দাঁতের রোগ সারাতেও থানকুনির জুড়ি মেলা ভার। মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে বা দাঁতে ব্যথা করলে একটা বড় বাটিতে থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে, তারপর ছেঁকে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায় চটজলদি।
থানকনি পাতা দিয়ে ৯ প্রকার রোগের এলাজ
গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খান, তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।
চলুন যেনে নেয়া যাক, থানকুনি পাতার ঔষুধি আরো কতিপয় গুণাগুণ-
১. পেটের রোগের চিকিৎসা
অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভালো করে মিশিয়ে বেটে নিন। মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যে কোনো ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়।
২. কাশির প্রকোপ কমে
২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই।
৩. জ্বরের প্রকোপ কমে
জ্বরের ধাক্কায় কাবু হয়ে পড়েন অনেকে। তাদের থানকুনি পাতা খাওয়া জরুরি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরা যায়।
৪. চুল পড়া কমে যায়
সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়া কমতে শুরু করে। পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেললেই হবে।
৫. শরীর থেকে বেরিয়ে যায় টক্সিক উপাদান
ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে, রক্তে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যায়।
৬. ক্ষতের চিকিৎসা
শরীরের কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেঁটে লাগিয়ে দেবেন। দেখবেন নিমিষেই কষ্ট কমে যাবে।
৭. হজম শক্তি বৃদ্ধি
থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতারও উন্নতি করে। থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে টিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।
৮. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে কোনো সমস্যা নেই! থানকুনি পাতা কিনে আনুন বাজার থেকে। তাহলেই দেখবেন সমস্যা একেবারে হাতের মধ্যে চলে আসবে। আসলে এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুণ কাজে আসে। কী সেই চিকিৎসা? হাফ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করুন। তারপর সেই মিশ্রন থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এক সপ্তাহ করলেই হাতেনাতে মিলবে উপকার।
৯. আমাশয় দূর করে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। টানা ৭ দিন খেলে মামলা খালাস!
থানকুনি পাতার পরিচয়
আমাদের হাতের কাছেই কিছু ভেষজ গাছ রয়েছে, যেগুলি অত্যন্ত অল্প দামে বা একটু খুঁজ করলে বিনা মূল্যেও পাওয়া যায়। অনেক সময় জেনেও, বিশ্বাস হয় না। তেমনই একটি ভেষজ উদ্ভিদ হল থানকুনি পাতা। ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতা। নাম থানকুনি। এটি খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। এর ল্যাটিন নাম centella aciatica. গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ঔষুধি সব গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়। রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অঞ্চলভেদে থানকুনি পাতাকে আদামনি, তিতুরা, টেয়া, মানকি, থানকুনি, আদাগুনগুনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, নামে ডাকা হয়। সিলেটে এটাকে বলা হয় কুদিমানকুনি।