একটি শিক্ষামূলক গল্প হতে মানুষ তার চলার দিক নিদের্শনা পায়। শিক্ষামূলক গল্প মানব মনের আত্মার খোরাক। শিক্ষামূলক গল্প সমাজের অনেক চিত্র তুলে ধরে। ৬টি শিক্ষামূলক গল্প একসাথে দেয়া হল। এই গল্পগুলো সত্য অবলম্বনে রচিত। অত্যন্ত মজার জ্ঞানমূলক এই ৬টি শিক্ষামূলক গল্প পাঠকদের কাছে পেশ করা হল যাতে গল্পগুলো পাঠ করে চলার সঠিক দিক নিদের্শনা পাওয়া যায়। আশা করছি ৬টি শিক্ষামূলক গল্প সবাইকে আনন্দ দেবে সেইসাথে উপকৃত করবে।
গল্পের শিরোনাম
১. আল্লাহকে দেখার অভিনব উপায়
২. শিয়া-সুন্নি বাহাছ অনুষ্ঠানে জুতা চোর
৩. তাবিজ সমাচার
৪. ‘যায়েদ আমরকে মারিল’ কেন?
৫. খরগোশের গোশত্ নিয়ে বিতর্ক
৬. সুন্নীর কবরে কে এই কুকুর?
আল্লাহকে দেখার অভিনব উপায়
হযরত হাজী সাহেব (রঃ) বয়ান করেন যে, মাওলানা ফখরুদ্দীন নিজামী (রঃ) অত্যন্ত উচ্চ স্তরের বুযুর্গ ছিলেন। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে মানুষের এছলাহী কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। একদিন এক মুরীদ তাঁর কাছে আরজ করল, “আল্লাহকে দেখার আমার বড় ইচ্ছা। দয়া করে কোন অজিফা বলে দিন যেন আল্লাহ্ তা’য়ালাকে দেখতে পাই।” তিনি বললেন, “ফরজ নামাজ তরক করে দাও।”
মুরীদ খুব আশ্চর্যান্বিত হলেন যে, ফরজ নামাজ ছেড়ে দেয়া কি সম্ভব? তিন দিন পর আবার হাজির হয়ে বললেন, “হযরত! আল্লাহকে দেখার বড় বাসনা। কোনো একটি অজিফা বলে দিন।”
তিনি বললেন, “তোমাকে অজিফা তো বলে দিয়েছি যে ফরজ নামাজ ছেড়ে দাও।”
এই কথা শুনে তিনি আবার ফিরে গেলেন। দুই তিন দিন পর হাজির হয়ে আবার সেই অনুরোধ করলেন। তিনি ঐ একই জওয়াব দিলেন। মুরীদ চলে গেলেন। কিন্তু ফরজ ছেড়ে দেয়ার হিম্মত হল না। তাই সুন্নত ছেড়ে দিয়ে রাত্রে শুয়ে পড়লেন। স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়া সাল্লামকে দেখতে পেলেন, তিনি বলছেন, “হায় আল্লাহর মায়ার উম্মত! আমার কী অপরাধ যে আমার সুন্নত ছেড়ে দিয়েছ? তখনই সেই ঘুম ভেঙ্গে উঠে পড়লেন তিনি এবং অযূ করে সুন্নত আদায় করলেন।
লোকটি সকাল বেলায় এই ঘটনা হযরত নিজামী (রঃ) কে শুনালেন।
হযরত নিজামী (রঃ) বললেন, “যদি ফরজ নামাজ ছেড়ে দিতা তবে আল্লাহ্ তা’য়ালা নিজেই দেখা দিয়ে বলতেন, “আমার ফরজ কেন ছেড়ে দিয়েছো?”
(খুতবাতে হাকীমুল ইসলাম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৬)
আসল কথা হল ঐ মুরিদ তাঁর জীবনে কখনো সুন্নাত ও ফরজ নামাজ কাযা করেননি। তাই তাঁর মযার্দা আল্লাহ ও রাসূলের নিকট এতো বেশি ছিল।
ব্যাখ্যা: ঐ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মুরিদ সুন্নত তরক করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে আবার সুন্নত আদায় করার সুযোগও হল আবার রাসূলুল্লাহ (সা) এর দীদারও নসীব হল। ফরজ তরক করলেও ঐরূপ সময় থাকতেই আদায়ের সুযোগ হতো আবার উদ্দেশ্যও পূর্ণ হতো। সুতরাং তরক করা একটি ভাণ মাত্র। আল্লাহওয়ালাদের কথা বিনা দ্বিধায় মেনে নিলে পরে বুঝা যায় যে, তাঁদের আদেশ বা উপদেশ কোরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে যায়নি। কামেল পীর এবং নেসবত কায়েম হয়েছে এরূপ মুরীদের ক্ষেত্রেই শুধু এরূপ আমল করা সম্ভব। নতুবা গোমরাহীর ভয় রয়েছে।
শিয়া-সুন্নি বাহাছ অনুষ্ঠানে জুতা চোর
পাঠক অবগত আছেন যে, আল্লাহর রfসূল (সা:) আমাদেরকে যা দিয়েছেন সেটা হক। তাঁর এন্তেকালের পর পর্যায়ক্রমে ছাহাবী, তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীগণ রাসূলের (সা:) শিক্ষার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা রাসূলের (সা:) জীবদ্দশাতেই স্বীকৃত হয়েছিল। এই চারটি যুগের নীতিমালার ভিত্তিতেই আমরা মুসলমান। এর পরবর্তী যুগে যদি কোন মুসলমান নিজেদের জ্ঞান-প্রসূত মতবাদ গড়ে তোলে তবে তা বাতেল হিসেবে নিক্ষিপ্ত হবে। এই মতবাদ সকল মুসলমানই মেনে নিয়েছেন। একবার হযরত মাওলানা কাসেম নানোতূবী (রঃ) কে শিয়াগণ চ্যালেঞ্জ করেন। সুতরাং এক বিরাট ‘বাহাছ’ বা বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিরাট এক মঞ্চের ওপর শামিয়ানা টানানো হল। শিয়া আলোমগণ এসে মঞ্চ ভরে গেল। শিয়া জনগণ মঞ্চের চার পাশে ভীড় করল। সুন্নী জনতাও অসংখ্য। কিন্তু অনেক ক্ষন হয়ে গেল সুন্নী আলেমের কোন খোঁজ নাই। মাওলানা কাসেম কোথায়? মাওলানা কাসেম কোথায়? চারিদিকে খোঁজ খোঁজ রব শুরু হল। কিন্তু তাকে কোথাও পাওয়া গেল না। সুন্নী জনগণ লজ্জায় মাথা নত করে রইল। শিয়ারা ভাবল আমাদের আলেমদের সঙ্গে পেরে ওঠা সহজ হবে না। আমাদের আলেমে মঞ্চ ভরে গেছে। আর ওদের মাত্র একজন আলেম। কেতাব-পত্রও ওদের নাই। আমাদের কেতাবে স্তুপাকার হয়ে গেছে মঞ্চ। শিয়া আলেমগণ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভাবলেন আমাদের বিরাট আয়োজন দেখে মাওলানা কাসেম সরে পড়েছেন, তিনি আর আসবেন না। সুতরাং শিয়া আলেমগণ উৎফুল্ল হয়ে নিজেদের এক তরফা বিজয় ঘোষণা করতে যাবেন এমন সময় দেখা গেল একজন লোক জনতার পিছন থেকে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসছেন। পরণে নীল লুঙ্গি, গায়ে মার্কিনের কোর্তা, মাথায় সফেদ টুপি, দ্বিধাহীন অন্তর, চেহারায় সত্যের দীপ্তি। ভীতিহীন চাহনি নিয়ে তিনি মঞ্চে উঠলেন। পায়ের জুতা খুলে বগলে চেপে রাখলেন। ইনিই মাওলানা কাসেম। সবার দৃষ্টিই মাওলানা কাসেমের দিকে। কিন্তু মাওলানা কাসেম বগলের জুতা কোথাও রাখছেন না কেন? সবাই বলল, “হুজুর, জুতাজোড়া এক পাশে রেখে দিন।” মাওলানা কাসেম না, এখানে শিয়া আছে। এখানে জুতা রাখা যাবে না।
সবাই জিজ্ঞেস করল: কারণ?
মাওলানা কাসেম: শিয়ারা জুতা চুরি করে থাকে।
শিয়া আলেমগণ অবাক হলেন এবং উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন “কোথায় দেখেছেন শিয়াদেরকে জুতা চুরি করতে? কী প্রমাণ আছে আপনার কাছে? মাওলানা কাসেম কেন, রাসূলুল্লাহ (সা) এর মজলিস থেকে একজন শিয়া জুতা চুরি করেছিল আপনারা জানেন না? শিয়া আলেমগণ বলেন কি? রসূলুল্লাহ (সা) এর জীবদ্দশায় মুসলমানদের মধ্যে শিয়া মতবাদ চালুই ছিল না, শিয়া ব্যক্তি আসবে কোথায় থেকে? আপনি কি ইতিহাস কিছুই জানেন না? মাওলানা কাসেম মাফ করবেন। আমি ভুল বলেছি। রসূলুল্লাহ (সা) এর যামানায় নয়। ব্যাপারটি ঘটেছিল ছাহাবাদের যামানায়। ছাহাবাগণ তালিমে মশগুল ছিলেন এমন সময় একজন শিয়া এসে তাঁদের মহফিল থেকে জুতা চুরি করে নিয়ে যায়।
শিয়ারা মিথ্যা কথা। এরূপ কোন ঘটনাই ঘটতে পারে না। কারণ ছাহাবাদের যামানায় কোন শিয়া ছিল না। মাওলানা কাসেম তাহলে তাবেয়ীনের যামানায় ঘটনাটি ঘটেছিল। শিয়া অসম্ভব! তাবেয়ীনের যামানায়ও কোন শিয়া ছিল না । মাওলানা কাসেম তাহলে নিশ্চয় তাবে-তাবেয়ীনের যামানায় শিয়া ব্যক্তিটি জুতা চুরি করেছিল। শিয়ারা বলল, ইতিহাস সাক্ষী আছে এই চারটি যামানায় কোন শিয়া ছিল না । কারণ শিয়া মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে এই চারটি যামানার অনেক পরে। সুতরাং শিয়াগন জুতা চুরি করতেই পারে না।
মাওলানা কাসেম এই যে চারটি যামানার কথা বললেন, এর সঙ্গে আমাদের কিরূপ সম্পর্ক রয়েছে বলতে পারেন? শিয়া নিশ্চয় বলতে পারি। এই চার যামানায় দেওয়া ইসলামের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে আমরা মুসলমান। পরবর্তী যুগের দেওয়া সব ব্যাখ্যাই বাতেল এবং আবর্জনায় নিক্ষিপ্ত। মাওলানা কাসেম একটু আগেই আপনারা স্বীকার করেছেন রসূলুল্লাহ (সা) এর যামানায় কোন শিয়া ছিল না। ছাহাবা, তাবেয়ী এবং তাবে-তাবেয়ীগণের যামানায়ও কোন শিয়া ছিল না। তাহলে কি আপনারা সেই মতবাদ গ্রহণ করেননি যা এই চার যামানার পরে সৃষ্টি হয়েছে এবং যা নিঃসন্দেহে বাতেল ও আবর্জনায় নিক্ষিপ্ত?
শিয়া আলেমগণ নির্বাক। কোন জওয়াব নাই। মাথা নিচু করে বসে রইলেন। জনতা স্তব্ধ। মাওলানা কাসেম এবার বগল থেকে জুতা বের করলেন। স্তব্ধ জনতার মধ্য দিয়ে জুতা পায়ে ধীর, স্বাভাবিক পদক্ষেপে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে গেলেন। কোন অহংকার নাই, কোন বাহাদুরী নাই, জলসা পিছনে রেখে অনেক দূর চলে গেলেন। শিয়া আলেমগণ তখনও নির্বাক। জনতা তখনও স্তব্ধ।
(মাওলানা আব্দুল হামিদ, আল্লামা বিনুরী টাউন, করাচী, ১৯৬২ ইং)
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
তাবিজ সমাচার
তাবিজ সম্পর্কে মানুষের খুব বাড়াবাড়ি দেখা যায়। সবকিছুতেই তাবিজ নিয়ে বসে। ভাব দেখে মনে হয় শীঘ্রই এরা বিয়ে না করেও তাবিজের দ্বারা সন্তান লাভের চেষ্টা করবে। সবকিছুতেই তাবিজ চাইতে আসার ব্যাপারে একটি ঘটনা মনে পড়ল।
এক মদ বিক্রেতা হযরত শাহ্ আব্দুল কাদের (রঃ) এর কাছে এসে বলল, “হযরত! মদ বিক্রি হয় না, একটা তাবিজ দিয়ে দিন।” তিনি একটি তাবিজ লিখে দিলেন। ফলে খুব মদ বিক্রি শুরু হল। মাদ্রাসার ছাত্ররা সন্দেহ করে বলল যে, হযরত এটা কী করলেন? মদ বিক্রেতাকেও তাবিজ দিলেন! এটা দেখছি গুনাহ্ করতে সাহায্য করা হল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি মদ বিক্রতাকে বললেন, “ভাই তাবিজটি নিয়ে এসো দেখি”! সে তাবিজ নিয়ে আসলে খুলে তিনি ছাত্রদেরকে দেখালেন। তাতে লিখা ছিল “আয় আল্লাহ্! মদ খাওয়া যাদের তকদীরে লিখা আছে তারা তো মদ খাবেই। সুতরাং এর দোকান থেকেই যেন খায়।”
সবাই লিখাটি দেখে অবাক! এসব বুযুর্গদের বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ হতে পারে? বস্তুতঃ মুহাক্কেক আলেমদের ভুল ধরাটাই ভুল।
—আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্ খন্ড ৩,পৃষ্ঠা ২১৯।
‘যায়েদ আমরকে মারিল’ কেন?
আমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গগণ সুন্নতের অনুস্বরণে বড় যত্নবান ছিলেন। হযরত ওসমান হারুনী (রঃ) এক ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, তিনি অজুতে যেভাবে খেলাল করে নামায পড়েছেন তা সুন্নত মোতাবেক ছিল না তাই অজুতে সুন্নত মোতাবেক খেলাল করে বিশ বছরের সব নামাজ পুনরায় আদায় করেন।
হযরত শায়খ আব্দুল হক রাদোলবী (রঃ) আল্লাহ্ পাকের এশকে এমন এক রূহানী হালতের শিকার হয়েছিলেন যাকে তাছাওউফের পরিভাষায় এস্তেগরাক বলা হয়অর্থাৎ দুনিয়াবী সকল বিষয় থেকে অন্য এক জগতে এমনভাবে তলিয়ে গিয়েছিলেন যে ত্রিশ বছর পর্যন্ত দিল্লী জামে মসজিদে খাদেমের সাহায্যে নিয়মিত নামায পড়তে যেতেন ও ফিরে আসতেন। তারপরও তিনি একা মসজিদের রাস্তা চিনতে পারতেন না। এত কিছু ভুল হওয়া সত্ত্বেও তিনি সুন্নতের উপর দৃঢ়পদ ছিলেন, সুন্নত ভুলতেন না। এমন কি তিনি একথাও বলতেন-
منصور بچه بود كه ازيك قطره بفرياد آمد اين جا مر دانند كه دريا ها فرد برند و آروغ نه زنند ٠
“এশকের পথে মনছুর (বিন হাল্লাজ) শিশুটি মাত্র ছিল তাই এক ফোটা (এশক সুধা) পান করেই ফরিয়াদ করতে লাগল।
আর এখানে একজন পুরুষ আছে যে দরিয়ার পর দরিয়া এশক পান করে ঢেকুর পর্যন্ত তোলে না”।
দেখুন এতটা গভীর এস্তেগরাকের মধ্যে থেকেও তিনি সুন্নতের পাবন্দ রয়েছেন এবং মনছুরেরও সমালোচনা করেছেন।
এইরূপ আরেক এস্তেগরাকে নিমজ্জিত ব্যক্তির ঘটনা শুনুন। তাকে তার ভাই মাদ্রাসার পাঠ্য পুস্তক পড়াতে চাইলেন। নাহুর কেতাব শুরু করলেন প্রথমে। সেই কিতাবে একটি উদাহরণ আসল- ضرب زيد عمرا٠
অর্থ- যায়েদ আমরকে মারিয়াছে।
যেভাবে আমরা কাউকে ইংরেজি ব্যাকরণ শিখাতে গিয়ে উদাহরণস্বরূপ বলি, Rahim is a bad boy. রহিম একটি খারাপ ছেলে।
তখন ঐ ছাত্র জিজ্ঞেস করলেন, কেন যায়িদকে মারিয়াছে? উস্তাদ বললেন, মারে টারেনি, এমনি একটি উদাহরণ আর কি? ছাত্র বললেন, “যদি না মেরে থাকে তবে মিথ্যা কথা লিখেছে। আর যদি বিনা কারণে মেরে থাকে তবে জুলুম করেছে। আমি এমন কেতাব পড়ব না যা মিথ্যা অথবা জুলুম শিক্ষা দেয়।
আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্; খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২২০
সুন্নীর কবরে কে এই কুকুর?
আগেকালের দিনে খাঁটি লোক পাওয়া যেতো। বাদশাহর দরবারে সাধারণ লোকেরাও হক কথা বলতে পারতেন। ওয়াজেদ আলী শাহ্ ছিলেন শিয়া। তিনি একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী বাদশাহ্ ছিলেন। একদিন তিনি একটি যানবাহনে করে সফরে বের হলেন। সঙ্গে তার একজন খাদেম ছিল। সে ছিল সুন্নী। বহু পূর্ব থেকেই শিয়া সুন্নীতে একটা বিরোধ রয়ে গেছে। ওয়াজেদ আলী শাহর বাহন একটি কবরস্থান অতিক্রম করছিল। সেখানে একটি ভাঙা-চুরা কবর ছিল। কোথায় থেকে এক কুকুর এসে এক পা তুলে সেই কবরে পেশাব করতে লাগল।
ওয়াজেদ আলী শাহ্ কবরের নমূনা দেখে ভাবলেন এটা কোন সুন্নীর কবর হবে। কারণ শিয়াদের কবর মজবূত এবং সাজানো হয়ে থাকে। কারণ সরকার ছিল শিয়াদের। আর এরা অধিকাংশই বিত্তবান হয়ে থাকে। ওয়াজেদ আলী শাহ্ সেই সুন্নী খাদেমকে বললেন, কবরটি মনে হয় কোন সুন্নীর হবে। সুন্নী খাদেম জবাবে বলল, “জী হুজুর! ঠিক বলেছেন। সেই জন্যেই তো শিয়া কুকুরটি সেখানে পেশাব করছে।”
কত সাহস একজন খাদেমের। যুক্তি সঙ্গত কথা বলতে একজন অধিনস্থ কর্মচারী বাদশাহরও পরোয়া করে না । তাদের এবাদত ছিল খালেছ আর আজকাল হক কথা মালিকও সহ্য করতে পারে না, কর্মচারীও সহ্য করে না। যুক্তি সঙ্গত কথায় স্বার্থে আঘাত লাগলে আর রক্ষা নাই। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে বিব্রত।
আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্ খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৪৫।
খরগোশের গোশত্ নিয়ে বিতর্ক
হযরত মওলান ইসমাঈল শহীদ (রঃ) একবার লক্ষ্ণৌ গমন করলেন। সেখানে অবস্থানের সময় একদিন তিনি একটি খরগোশ শিকার করে এনে জবাই করে এক পাশে রাখলেন। এক শিয়া মুজতাহেদ হযরত মাওলানার সাথে দেখা করতে আসলেন। এমন সময় হঠাৎ একটি কুকুর এসে জবাই করে রাখা খরগোশটিকে শুঁকতে লাগল। কতক্ষণ শুঁকার পর কুকুরটি চলে গেল। মুজতাহেদ সাহেব মাওলানা সাহেবকে বললেন, “দেখুন মাওলানা সাহেব কুকুরেও খরগোশ খায় না” (এই কথা বলার কারণ হল শিয়া মজহাবে খরগোশ খাওয়া হারাম)
মাওলানা সাহেব তৎক্ষণাৎ জওয়াব দিলেন, “এই খরগোশ কুকুরের খাওয়া জিনিষ নয়, এটা মানুষের খাদ্য।”
তিনি এত সুক্ষ্ণ এবং ভদ্রভাবে শিয়াকে কুকুর এবং সুন্নীকে মানুষ বললেন যে, শিয়া মুজতাহেদ সাহেব হতবাক হয়ে পড়লেন। তার জওয়াব দেয়ার আর কিছুই থাকল না। হযরত মাওলানা ছিলেন স্বয়ং এক খোলা তরবারি। মুহূর্তেই বাতিলকে নিশ্চিহৃ করে দিতেন। হাজার হাজার মাইল দূর পর্যন্ত তার কাছে স্বার্থপরতা খুঁজে পাওয়া যেতো না।
আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্; খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৪৫।
জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ এই ৬টি শিক্ষামূলক গল্প পড়ে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। ৬টি শিক্ষামূলক গল্প পাঠে কোনটি সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে জানাবেন। ভাল লাগলে আরো ৬টি শিক্ষামূলক গল্প দেয়া হবে।
দ্রব্যগুণ ও টোটকা চিকিৎসা শিখতে ভিজিট করুন
মো: নজরুল ইসলাম