সকল শিক্ষার্থীই শ্রেষ্ট রিজাল্ট অর্জন করতে আগ্রহী। এ জন্য কত চেষ্টা, কত পরিশ্রম করে থাকে সবাই। কিন্তু ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য কিছু টেকনিক বা কৌশল জানা আবশ্যক। ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য কোন মন্ত্র বা তাবিজ নেই যা পড়ে সফল হবেন।
“পড়া, পড়া এবং পড়া” এই কথায় যারা বিশ্বাসী তারাই হতে পারে ভাল ছাত্রের যথার্থ উদাহরণ। কঠোর পরিশ্রম, বিরামহীন সাধনা ও লাগাতার প্রচেষ্টা মানুষকে পৌছে দেয় সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতে। ছাত্র জীবন সংগ্রামের প্রস্তুতি কাল। যে ছাত্র পড়াশুনায় মনযোগি, লেখাপড়াকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে এবং প্রতিদিনের পড়া সময় মত শেষ করে, সেই ছাত্রই ভাল ছাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। প্রত্যেক ছাত্রকেই তার নিজের ও দেশের জন্য হতে হবে অধ্যাবসায়ী, পরিশ্রমী ও লেখা পড়ায় অধিক আগ্রহী। একজন ছাত্রকে ভাল ফলাফলের জন্য মেনে চলতে হয় নানা রকম নিয়ম-কানুন। নিচে তাই তুলে ধরা হলো Point আকারে-
অধ্যাবসায়ী
সৃষ্টির আদি হতে মানুষ পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে আসছে তার অস্থিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তারা যদি সংগ্রাম না করত তবে অনেক আগেই ধবংশ হয়ে যেত। ব্যক্তিগত জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং জাতীয় জীবনে পরিশ্রম অত্যাবশ্যক। যে ছাত্র যত বেশি পরিশ্রমী সে কম পরিশ্রমী ছাত্রদের তুলনায় ভাল ফলাফল করে। যে ব্যবসায়ী বেশি পরিশ্রমী সে কম পরিশ্রমী ব্যবসায়ীর তুলনায় বেশি সফল। এভাবে যে যত বেশি পরিশ্রমী সে তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমাদের অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করতে অনিচ্ছুক, তারা মনে করে আল্লাহ মুখ দিয়েছেন, তিনিই খাবার যোগাবেন। আবার এমনো লোক আছে, যারা শুধু ভাগ্যে বিশ্বাস করে তাদের দায়িত্বকে অবহেলা করে। তাদের মনে রাখা উচিত যে, মানুষ নিজেই তার ভাগ্যের নির্মাতা। কঠোর অধ্যাবসায় ও অনুশীলনের দ্বারা বহু অসাধ্য কাজও নির্বিঘ্নে সমাধান করা যায়। অনুশীলন, অধ্যাবসায় ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করাও সম্ভব। যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বিংশ শতাব্দীর প্রতিভাধর বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যিনি জার্মানীতে জন্ম গ্রহন করেছিলেন। মা সঙ্গীত প্রিয় ছিলেন ফলে মায়ের উৎসাহে তিনি ৬ বছর বয়সেই বেহালা বাজাতে শিখেছিলেন। লেখাপড়ায় খুব দুর্বল হওয়ায় ৯ বছর বয়সেও তিনি স্কুলে ভর্তি হতে পারেন নি। ভর্তি পরিক্ষায় সাফল্য লাভের জন্য তাকে দু’দু’বার পরিক্ষা দিতে হয়েছিল। ডিগ্রী পরীক্ষায় কোন রকম পাশ করতে তাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। স্মৃতি শক্তির স্বল্পতা হেতু তিনি স্বুলে চাকুরী জোটাতে ব্যর্থ হলেন। তার পর তিনি স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর জন্য সচেষ্টা হলেন। ক্রমাগত অনুশীলন ও অধ্যাবসায়ের ফলে স্বরন শক্তি বাড়াতে সক্ষম হলেন। তারপর পদার্থ বিজ্ঞানে অর্জন করলেন নোবেল পুরষ্কার। মনে রাখতে হবে, বহুবার ব্যর্থতার সিঁড়ি বেয়েই সাফল্যের দরজায় পৌছতে হয়। এভারেষ্ট বিজয়ের কথাই ভাবুন। দীর্ঘ ২২ বছর অভ্যাহত প্রচেষ্টার পর দুর্গম গিরিশিঙ্গ জয় করেছেন এডমান্ড হিলারী ও তেনজিং। তার পূর্বে এই রেকর্ড গড়তে গিয়ে ১৬ জনের প্রাণ দিতে হয়েছে। উপলব্দি করুন এই গিরিশৃঙ্গ জয় করতে কত দু:সাহসিক অভিযানের দরকার হয়েছে। অধ্যাবসায়, পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও সহিষ্ণুতা ছাড়া বলুন কে-ইবা সাফল্য লাভ করতে পেরেছে? ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য অধ্যাবসায় জরুরি।
নিউটন বলেছিলেন, “আমার আবিষ্কারের কারণ আমার প্রতিভা নয়। বহু বছরের পরিশ্রম ও নিরবিচ্ছিন্ন চিন্তার ফসল। আমি আমাকে সার্থক করেছি। যখনই যা আমার মনের সামনে এসেছে শুধু তারই মিমাংশায় আমি ব্যস্ত থাকতাম। ফলে অস্পষ্টতা থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্টতার মধ্যে উপস্থিত হয়েছি।
দার্শনিক ইয়ং বলতেন- “মানুষ যা করেছে, মানুষ তা পারবে।”
আকাংখা
আকাংখার প্রতি প্রত্যেক মানুষেরই দৃষ্টি ভঙ্গি রাখা উচিত যেটি জীবনের পথে তাকে পরিচালিত করবে। জীবনের গতি সঞ্চার করবে এবং তাৎপর্যময় করে তুলবে। কোন ব্যক্তির জীবনে যদি পথের নিদের্শনা না থাকে এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যদি তার সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা না থাকে তাহলে তার সীমিত আয়ুস্কাল এবং জীবন শক্তি সিদ্ধান্তহীনতার ক্লান্ত এক বিভ্রান্তিতে এসে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। যার জীবনে কোন নির্ধারিত আকংখা নেই সে বাক- শক্তিহীন ব্যক্তির মত পরিস্থিতি কর্তৃক ধাবিত হয়ে স্থান তাকে স্থানান্তরে ঘুরপাক খেতে থাকে। যে ব্যক্তির জীবনে আকাংখা আছে তার সকল চিন্তা এবং সকল কর্ম শুধু মাত্র সেই লক্ষ্যস্থলেই কেন্দ্রীভূত থাকে। শৈশবকাল থেকেই সে সঠিক পদক্ষেপ তার লক্ষ্যস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তার শক্তির কোন অপচয় নেই, প্রাণ প্রাচুর্য্যের কোন বিনাশ নেই, নেই কোন দীর্ঘ সূত্র্রিতা। তার গন্তব্যস্থল সুস্পষ্টরূপে দৃশ্যমান। তার দেহ মন সকল প্রকার ভীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সংশয় ও অনিশ্চয়তা পরিহার করে শুধুমাত্র সেদিকেই এগিয়ে যেতে থাকে। তার জীবন সুপরিকল্পিত। তার প্রতিটি পদক্ষেপ সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত। বস্তুত: আকাংখাই মানুষকে সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে প্রনোদিত করে এবং জীবনের চরম সার্থকতা অর্জনে সমর্থ করে।
সময়ানুবর্তিতা
পৃথিবীর প্রত্যেক বিজ্ঞানী, মনীষী, সফলকামী ব্যক্তি সময়ের সঠিক ব্যবহারের কথা বলেছেন বারে বারে। তারা নিজেরাও সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে হয়েছেন গুণীজন ও সম্মানী ব্যক্তিত্ব। তাইতো বলা হয় Time is money. আজকের সময়টুকু আগামীতে হবে আপনার মূল্যবান সম্পদ। তাই প্রতিদিনের কাজ, প্রতিদিনের পড়ালেখা প্রতিদিন করে নেয়াই উচিত। আজকের কাজ কখনো আগামী দিনের জন্য তোলে রেখনা। কেননা “বারবার কারো পানে ফিরে চাহিবার নাই যে সময় নাই নাই” বলেছেন কোন এক মনীষী। একটু একটু করে প্রতিদিন পড়া লেখা করতে হবে আপনাকে। এক সপ্তাহ খুব ভাল করে পড়লেন, তারপর ৩-৪ দিন বসে থাকলেন এটা মোটেই ভাল লক্ষন নয়। আপনার গন্তব্যে পৌছতে হলে সময়টা রুটিন করে কাজে লাগাতে হবে ভালভাবে। যারা আজ সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন তারাই আজ হয়েছেন পৃথিবীতে স্বরণীয় ও বরণীয়। সময়টাকে প্রতিদিনের ফ্রেইমে বাঁধাই করে শুরু করুন আপনার সংগামী যাত্রা। এ যাত্রা পথের প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয় কাজ আপনার চোখের সামনে রাখুন আর কাজ চালিয়ে যান অনায়াছে ও দৃঢ়তার সাথে। বিরামহীন সাধনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করে নিন আপনার কাংখিত সাফল্য। তাহলে আর দেরি কেন? অযথা, অহেতুক সময় নষ্ট না করে শুরুটা হউক এখন থেকেই। ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য সময় জ্ঞান থাকা দরকার।
ভাল বন্ধু নির্বাচন
আত্মীয়তার বন্ধন ব্যতীত বন্ধুত্ব হল দু’জন ব্যক্তির ভাবগত সম্পর্ক। এটি মানুষের উপর আল্লাহর অশেষ আর্শিবাদ। মানুষ একা বাস করতে পারে না। একজন মানুষের সুখে-দুঃখে তাকে অনুভব করার মত কেউ না কেউ না থাকলে তার জীবন যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠে। তাছাড়া নিজের ভাল ক্যারিয়ার গঠন ও গ্রুপস্টাডি করার জন্য প্রয়োজন সৎ, মিতব্যয়ী ও ন্যায় পরায়ন বন্ধূ। একজন ভাল বন্ধু সম্পদ বা সুনামের চেয়েও অধিকতর ভাল। একজন অন্তরঙ্গ বন্ধূ সে-ই যে কখনো বন্ধুর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে না, করে না বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং প্রয়োজনের সময় বন্ধুর পাশে থাকে। দুঃসময়ে অন্তরঙ্গ বন্ধুরা কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না। এর মানে এই নয় যে, শুধু প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্যই বন্ধু বরং প্রকৃত বন্ধুরা মনস্তাত্বিক বন্ধনে বাঁধা থাকে। দুঃখ ও সুখে আমরা একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাহায্য কামনা করি। ভাল বন্ধুত্ব করা সহজ কথা নয়। প্রথমে যা প্রয়োজন তা হল বিশ্বাসী মনোভাব। আত্মবিশ্বাস একমাত্র আত্মবিশ্বাস থেকেই আসে। গোপনীয়তা হল বিষের মত যা বন্ধুত্ব ধ্বংস করে। অধিকন্তু বন্ধুর প্রতি অধিকতর কঠিন হওয়া উচিত নয়। বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। কারণ ভাল বন্ধু যেমন স্বর্গ রচনা করতে পারে তেমনি পারে খারাপ বন্ধু নরক সৃষ্টি করতেও। বন্ধুর দোষ-ত্রুটি দৃষ্টি গোচর হলে তাকে বন্ধুসূলভভাবে সংশোধন করে দেয়া উচিত। হেয় করার উদ্দেশ্য যেন না থাকে। আমার মতে (লেখক), ‘বন্ধু নির্বাচনে ভূল করলে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়।’ তাই আমাদের উচিত খারাপ বন্ধুত্ব ত্যাগ করে যত্নসহকারে ভাল বন্ধুত্ব করা।
হতাশা দূর করা
হতাশা মানে আশাহীনতা। এটি মানুষের মনে বিশেষ করে অল্প বয়স্ক ছেলে বা মেয়ের মনে গভীরভাবে নাড়া দেয়। এটাকে মানসিক রোগও বলা যেতে পারে। হতাশা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক বা সামাজিক কারণে হতে পারে। যখন কোন রাজনৈতিক নেতা তার স্বপ্ন পূরনে ব্যর্থ হন, তখন তিনি হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন। বেকার সমস্যার কারণে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোক, কিংবা বেশি অভাবী লোক হয়ে থাকেন হতাশাগ্রাস্ত। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে রয়েছেন যারা তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য চাকুরী খুঁজছেন কিন্তু তারা তা পাচ্ছেন না। প্র্রেমের কারণে অল্প বয়স্ক ছেলে-মেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়। হতাশার জন্য দরিদ্রতাও দায়ী। ভাল ছাত্র হতে হলে যে ভাবে হোক আপনে সর্বাগ্রে হতাশা দূর করতে হবে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি কোন কাজ আন্তরিকভাবে করতে পারে না। পারে না জীবন যাত্রায় আশাবাদী হতে। কাজেই আপনাকে হতাশা পরিহার পূর্বক প্রবল আশা বুকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে এখনই। অন্যথায় ব্যর্থ হবে আপনার কাংখিত সাফল্য।
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
দুশ্চিন্তা পরিহার করা
আমরা দুশ্চিন্তা শব্দের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। দুশ্চিন্তা বলতে বুঝায় মনের অস্থির ভাবকে যা শান্তিপূর্ণ অবস্থার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। কোন ব্যক্তিকে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বলতে পারি তখনই, যখন সে কোন মানসিক চাপে বা উত্তেজনায় ভোগে। অবিরাম উদ্ধগ্রতা দেহ ও মনের সজিবতাকে নষ্ট করে ফেলে এবং ভয়াবহ হৃদরোগসহ নানারকম মরাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে। দুশ্চিন্তা যে কোন প্রকারেই হোক না কেন এটা বিপজ্জনক। আমাদের সকলেরই উচিত বিশেষ করে যারা ছাত্র তারা যে কোন প্রকারে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করা
কবি নির্মলেন্দু গুন বলেন, “আকাশের সূর্যটা যদি তুমি ছুঁতে চাও, স্বাস্থ্যটা ভালো কর এক্ষনি শুতে যাও। ঘুম যদি ভাল হয় স্বাস্থ্যটা ফুটবে, সূর্যের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠবে।”
প্রত্যুষে শষ্যাত্যাগ একটি অতি উত্তম অভ্যাস। প্রত্যুষে শষ্যাত্যাগকারী তার দৈনন্দিন কাজকর্ম ভালভাবে আরম্ভ করতে পারে। অন্যরা ঘুম থেকে উঠার পূর্বেই শেষ করে ফেলতে পারে অনেক মূল্যবান কাজ। যে কাজ খুব সকালে করা হয় তা খুব নিপুনভাবে সম্পাদিত হয়। এ সময় মন ও শরীর দুই-ই ভাল থাকে, ভাল থাকে কাজ করার প্রবল মানসিকতা। প্রত্যুষে শষ্যাত্যাগকারী মৃদু-মন্দ বায়ু সেবনে সর্বদা থাকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান। এটা তাকে দিনের পরিশ্রমের কাজকর্ম করতে শক্তি যোগায়। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ে তার কাজকর্ম শেষ করতে সহায়তা করে। সুনিন্দ্রার জন্য রাতে ঘুমানোর সময় নির্ধারিত করতে হবে। রাতে ভালভাবে ঘুম হলে প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে পরবর্তী দিনের কাজকর্ম শুর করতে পারবেন। তাই শৈশব থেকেই প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করার অভ্যাস করা উচিত। তাই তো বলা হয়, “সকাল সকাল ঘুমিয়ে যারা সকাল সকাল উঠে স্বাস্থ্যবান, ধনী আর বিজ্ঞ তারাই বটে।
স্বল্পহার
একটি প্রবাদ আছে, “Men die not from less eating but from over eating” অর্থাৎ মানুষ অল্পহারে মরে না, অধিক আহারে মরে। আমাদের শারীরিক চাহিদা অনুসারে সময়মত এবং সঠিকভাবে আহার করা উচিত। সব ধরনের খাদ্যগুণ সম্বলিত ও শরীরের জন্য দরকারী সে ধরণের খাদ্য গ্রহন করা উচিত। বেশী খেলেই স্বাস্থ্যবান হওয়া যাবে এ ধরনের ধারণা আদৌ সঠিক নয়। অতি ভোজনে হজমের সমস্যা হয় যা লিভারের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে ফেলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। খাদ্য তালিকায় প্রোটিন, আমিষ, শর্করা, খাদ্যপ্রান, খনিজ লবন ও পানি অন্তর্ভূক্ত থাকতে হবে। এক কথায় সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যেকেরই উচিত সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
প্রবাদ আছে, “স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।” তাই সুখী হতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যেমনঃ হাটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। হাটা ও সাঁতার কাটা হল সর্বোৎকৃষ্ট শারীরিক ব্যায়াম যা সব বয়সের লোকদের জন্য উপকারী। শারীরিক ব্যায়াম পেশীকে শক্ত ও সুদৃঢ় করে। এটা আমাদেরকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলে। শারীরিক ব্যায়াম খাদ্য হজমে, রক্ত চলাচলে এবং মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। মুক্ত মাঠে সকালে ব্যায়াম করা উচিত। স্বাস্থ্যই সম্পদ- তাই এ সম্পদকে ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। যদি কেউ নিয়মিত ব্যায়াম না করে তবে তার পেশীগুলো ধীরে ধীরে অলস ও অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং তাকে অকর্মা করে তোলে।
অলসতা পরিহার করুন
মানুষের নিকৃষ্ঠতম অভ্যাসগুলোর মধ্যে অলসতা হল প্রধান যা একজন মানুষের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। অলসতা দরিদ্র বয়ে আনে। একজন ছাত্র অলস হলে ভাল ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়। অলসতা ধ্বংস ছাড়া কিছুই বয়ে আনে না। জীবনের সফলতা নির্ভর করে পরিশ্রমের উপর। পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম ব্যক্তিরা পরিশ্রমের গুণেই বড় হয়ে উঠেছেন। পক্ষান্তরে শুধু অলসতার কারণে অনেক রাজা তাদের রাজ্য এবং অনেক ধনী ব্যক্তি তাদের ধন হারিয়েছেন, পরিণত হয়েছেন ভিক্ষুকে। উন্নত বিশ্বে অলসতাকে এক ধরণের পাপ মনে করা হয়। তাই আমাদের উচিত অলসতাকে ত্যাগ করা ব্যক্তিগত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবনের উন্নতির জন্য। ভাল ছাত্র হওয়ার জন্য অলসতা ত্যাগ করা উচিত।
শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করুন
সাফল্যের গোপন রহস্য সম্পর্কে ব্যাখ্য দিতে গিয়ে শব্দ বিশারদ ও ভাষা বিজ্ঞানী বলেন,
If your vocabulary is limited, your chances of success are limited. If you methodically increase your vocabulary, you will improve your chances for success.’’
একাগ্রচিত্তে শব্দ প্রয়োগ চর্চার মাধ্যমে শব্দ সম্ভার সমৃদ্ধ করুন । শব্দ আত্মস্থ করার জন্য একটি নেশা তৈরি করুন। শব্দের নিপুন প্রয়োগের কারণেই একজন বিক্রেতার বিক্রয় তিনগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার একটি মাত্র শব্দের ভুল প্রয়োগের জন্যেই গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিশ্চিত বিজয়ী প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। তেমনি একটি শব্দের নিপুন প্রয়োগে বন্ধুত্ব সুষ্টি হয়। সুতরাং আপনার বাংলা হউক কিংবা ইংরেজি হউক শব্দ সম্ভার মজবুত করতে প্রতিদিন চর্চা করে যান বিরামহীনভাবে।
নিয়মানুবর্তিতা পালন করা
নিয়মাবর্তিতা বলতে যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করাকে বুঝায়। মানব জীবনে উন্নয়নের কাংখিত শিখরে আরোহন করতে প্রয়োজন নিয়ম মাফিক জীবন পরিচালনা। ভাল ছাত্র হতে সঠিক ভাবে রুটিন তৈরি করে খাওয়া-ধাওয়া, ঘুমানো, জাগ্রত হওয়া, খেলাধুলা, ব্যায়াম ইত্যাদিসহ ২৪ ঘন্টার একটি বিজ্ঞানসম্মত রুটিন আবশ্যক। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর হাতিয়ার এই মহামূল্যবান রুটিন যা আপনার জীবনের প্রতিটি কাজকে পরিচালিত করবে একটি সুপরিকল্পিত উপায়ে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা, যথাসময়ে নাস্তা করা, প্রতিটি কাজ সময় মত করা, কর্তব্য পালনে দেরি না করা, এগুলো হল একজন সময়ানুর্তীর কাজ।
চরিত্র ভাল রাখা
লেখা-পড়ায় ভাল হওয়া, ভাল রিজাল্ট অর্জন করার জন্য একজন ছাত্রকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। মনের ও দেহের ক্ষতি করে এমন সব কুকর্ম পরিত্যাগ করতে হবে। বিরত থাকতে হবে নেশা জাতীয় কোনো বস্তু সেবন করা থেকে । মেজাজ রাখতে হবে স্বাভাবিক, আর শিক্ষা অর্জন করে যেতে হবে বিরামহীনভাবে। শিক্ষক ও গুরুজনের সম্মান করে চলতে হবে। পরীক্ষায় নকল করা চলবে না। রুটিন মাফিক লেখা-পড়া চালিয়ে গেলে সাফল্য আপনার কদম ছুঁতে বাধ্য। ছোটদের স্নেহ আর বড়দেরকে সম্মান করে চলা ভাল ছাত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বেশিষ্ট্য। এ সকল বিষয় মেনে চললে আপনি হতে পারেন যুগের ইতিহাস সৃষ্টিকারী একজন ভাল ছাত্র।
কাক ও পেঁচার উলুক যাদু সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিজিট করুন
রচনায়: মো: নজরুল ইসলাম, ০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮, nazruld@yahoo.com
ধন্যবাদ সবাইকে