মূসা (আ) ও মিথ্যাবাদী ব্যক্তির ১টি মজার গল্প হল আজকের বিষয়। মূসা (আ) মিথ্যা কথা শুনতে পারতেন না। এ নিয়ে কিতাবে ১টি মজার গল্প বর্ণিত আছে।
এক ব্যক্তি হযরত ঈসা (আঃ) এর খেদমতে সফরে রওয়ানা হল। ঈসা (আঃ) এর সঙ্গে তিনটি রুটি ছিল। এক নদীর তীরে পৌঁছে তিনি দুইটি রুটি আহার করলেন এবং পানি পান করার জন্য নদীতে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন অবশিষ্ট একটি রুটি নাই। তিনি সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “রুটি কে নিয়েছে?” লোকটি বলল, “আমি জানি না।”
তিনি লোকটিকে নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। রাস্তা চলতে চলতে যখন ক্ষুধার উদ্রেক হল তখন তিনি দূরে একটি হরিণী দেখতে পেলেন। তার সঙ্গে দুইটি বাচ্চা ছিল। তিনি একটি বাচ্চাকে ডাকলেন। বাচ্চাটি কাছে আসল। তিনি ঐ বাচ্চাটাকে জবাই করলেন এবং ভূনা করে সেই লোকটিকে নিয়ে আহার করলেন। অতঃপর বললেন, “আল্লাহর হুকুমে জিন্দা হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে চলে গেল। ঈসা (আঃ) লোকটিকে বললেন, “এই হরিণের বাচ্চা জিন্দা হয়ে যাওয়ার মোজেযা যিনি দেখালেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল রুটিটি কে নিয়েছে?” লোকটি বলল, “আমি জানি না ।”
তিনি লোকটিকে নিয়ে আবার রওয়ানা হলেন। পাহাড় থেকে ঝর্ণা হয়ে নেমে আসা একটি নদী সামনে পড়ল। তিনি লোকটির হাত ধরে পানির উপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “যিনি বিনা নৌকায় নদী পার হওয়ার এই মোজেযা দেখালেন তাঁর কসম দিয়ে বলছি, তুমি বল রুটি কে নিয়েছে?” লোকটি আগের মতই জওয়াব দিল, “আমি জানি না”।
হযরত ঈসা (আঃ) অতঃপর এক জঙ্গলের কাছে পৌঁছে বালি জমা করতে শুরু করলেন। যখন এক বিরাট বালির স্তুপ হয়ে গেল তখন সেই স্তুপকে লক্ষ্য করে বললেন, “আল্লাহর হুকুমে সোনা হয়ে যাও।” তখনই বালির স্তুপটি সোনা হয়ে গেল। তিনি সেই সোনাকে তিন ভাগ করলেন এবং লোকটিকে লক্ষ্য করে বললেন, “এই তিন ভাগ সোনার মধ্যে এক অংশ আমার, আর এক অংশ তোমার এবং অপর অংশটি যে রুটি নিয়েছে তার।” এই কথা শুনে লোকটি তৎক্ষণাৎ বলে উঠল, “রুটি তো আমিই নিয়েছিলাম ।”
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
হযরত ঈসা (আঃ) বললেন, “ তাহলে তুমি সব সোনাই নিয়ে নাও”। এই বলে লোকটা থেকে পৃথক হয়ে তিনি চলে গেলেন। লোকটি তিন ভাগ সোনার সবগুলি একা পেয়ে মনের আনন্দে জঙ্গলের ধারেই অবস্থান করতে লাগল। এমন সময় দুই ব্যক্তি এসে তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করতে উদ্যত হল। লোকটি বলল, “লড়াই করার মধ্যে হেরে যাওয়ার ভয় সবারই আছে। তাই লড়াই না করে এসো আমরা এই সম্পদ সমান তিন ভাগ করে নেই। তোমরা একজন বাজারে গিয়ে কিছু খাবার নিয়ে এসো। ক্ষুধা নিবৃত্তি করার পর মাল ভাগ করা যাবে।”
সুতরাং তার প্রস্তাবে তারা রাজি হল এবং সেই দুইজনের মধ্যে এক ব্যক্তি খাবার আনতে বাজারে গেল এবং মনে মনে ভাবল, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিলে এই দুইজন মারা যাবে তখন সমস্ত সোনা আমার একার হয়ে যাবে। এই ভেবে সে খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দিল। এদিকে এরা দুইজন পরামর্শ করল যে, এই তৃতীয় ব্যক্তিটিকে যদি মেরে ফেলা হয় তবে সমস্ত সোনা তাদের দুই জনের ভাগে বেশি করে পড়বে । তাই লোকটি বাজার থেকে ফিরে আসতেই তাকে মেরে ফেলতে হবে। সুতরাং লোকটি যখন খাবার নিয়ে ফিরে আসল তখন দুইজন মিলে তাকে হত্যা করে ফেলল এবং মনের আনন্দে খাবার খেতে লাগল। খাবার খাওয়া শেষ হতে না হতেই বিষের প্রতিক্রিয়ায় এরা দুইজনও সেখানে মারা পড়ল।
সোনার তিনটি স্তুপই যেমনকার ছিল তেমনি সেখানে পড়ে রইল। কেউ পেল না। তিন জনের লাশই সোনার পাশে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে পড়ে থাকল। ঘটনাক্রমে ঈসা (আঃ) আবার সেই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি এই দৃশ্য দেখে সবাইকে ডেকে বললেন, “দেখ, সম্পদের হাকীকত এই। এর লোভ থেকে নিজেকে বাঁচাও”।
(কাছাছুল আউলিয়া, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-১০০১)
দ্রব্যগুণ ও টোটকা চিকিৎসা শিখতে ভিজিট করুন
০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮