মানুষের শরীর, মন সুস্থ আর সতেজ রাখতে হাঁটার ১০টি উপকারিতা জেনে নিতে পারেন। হাঁটা সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম। ছোট-বড় যে কেউ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন। প্রশ্ন জাগতে পারে ব্যায়ামের জন্য এত কিছু থাকতে হাঁটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? হাঁটলে প্রাকৃতিকভাবে পাবেন সুস্থতা ও প্রাণবন্ত অনুভূতি। আরো রয়েছে শত উপকার। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টেসকো লিভিং ডটকম থেকে নেওয়া হাঁটার ১০টি উপকারিতা নিয়ে এই প্রতিবেদন।
১. সুস্থ হৃদপিণ্ড, সুন্দর জীবন
যুক্তরাজ্যের স্ট্রোক এসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাদের উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হয়। এছাড়া নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে শতকরা ২৭ ভাগ পর্যন্ত উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা কমে। ফলে হার্টের বিভিন্ন রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
২. বাড়বে সুস্থতা
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে ডাক্তারের পরামর্শে তারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন। এতে অবশ্য তারা উপকার পান। মজার কথা এতে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমে যায়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিয়মিত হাঁটলে ৬০ ভাগ পর্যন্ত কোলন ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও খুব ভালো।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ ব্যায়াম
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম করতে দেখা যায়। যদি ওজন কমাতে চান, তবে প্রতিদিন ৬০০ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যেটা একদিনের খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির চেয়ে বেশি। যার ওজন ৬০ কেজি তিনি যদি প্রতিদিন ঘণ্টায় ২ মাইল গতিতে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করেন, তবে ৭৫ ক্যালরি শক্তি ক্ষয় করতে পারেন। যদি ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটতে অভ্যস্ত হন তবে, ৯৯ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে পারেন। ঘন্টায় ৪ মাইল গতিতে হাঁটলে আরও বেশি ক্যালরি ক্ষয় করতে পারবেন। এতে ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫০। হাঁটলে দেহের পেশীগুলো আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
৪. স্মৃতিশক্তি বাড়ে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সাধারণত মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ৬৫ বা এর বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতি ১৪ জনের মধ্যে ১ জনের স্মৃতিভ্রম হয়। আর ৮০ বা এর বেশি বয়সীদের ৬ জনের মধ্যে ১ জনের দেখা দেয় স্মৃতি হারানোর রোগ। নিয়মিত বিভিন্ন ব্যায়াম অনুশীলনে মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাড়ে। এতে স্মৃতিহানি হওয়ার ঝুঁকি ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের মধ্যে যারা সপ্তাহে অন্তত ৬ মাইল পথ হাঁটেন তাদের স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে।
৫. জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি নেই
নিয়মিত হাঁটাচলা করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণত বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন হাড় ও সংযোগস্থলে ব্যথা করে। শরীরের জয়েন্টগুলোকে সুস্থ রাখতে হাঁটা নিঃসন্দেহে খুবই কার্যকর ব্যায়াম।
৬. পায়ের শক্তি বাড়ায়
হাঁটলে শুধু পায়ের শক্তিই বাড়ে না পায়ের আঙুলেরও ব্যায়াম হয়। এছাড়া কোমর এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ নড়াচড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই সুস্থ থাকে। আয়ুবেদিক ও ইউনানী চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিজিট করুন
৭. বাড়ে পেশীশক্তি
হাঁটলে শুধু পা চলে না দুহাতও সমান তালে চলে। এতে হাতের প্রতিটি জয়েন্ট, ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম হয়। ব্যাকপেইনের সমস্যা কমে যেতে পারে নিয়মিত ব্যয়ামের মাধ্যমে।
৮. ভিটামিন ডি
দিনের আলোতে, বিশেষ করে সকালে হাঁটার অভ্যাস করলে শরীর ভিটামিন ডি-তে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। গবেষকরা আরও জানান, ভিটামিন ডি অন্যান্য কোষের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। এতে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ সহজে অন্যকোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এ জন্য হাঁটা হতে পারে উত্তম ব্যায়াম।
৯. প্রাণবন্ত শরীর ও মন
সকালের প্রকৃতি এমনিতেই থাকে স্নিগ্ধ। এ সময় হাঁটার মজাই আলাদা। প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের সময় মন স্বাভাবিকভাবেই ফুরফুরে থাকে, শরীর ও মন সতেজ হয়। শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে অক্সিজেনের প্রাণপ্রবাহে মাংসপেশীগুলো শিথিল ও রিলাক্সড হয়।
১০. সুখ প্রতিক্ষণ
যাদের নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস, তাদের সঙ্গীর অভাব হয় না। একজন আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন আনন্দের মুহূর্তগুলো। সামাজিক পরিমণ্ডলে প্রভাব বাড়ার পাশাপাশি মানসিকচাপ ও টেনশন কমে শুরু করে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে, নিয়মিত হাঁটাচলা করলে একাকিত্বের অনুভূতি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এতে মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। হাঁটার ১০টি উপকারিতা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।