পেট ফাঁপার চিকিৎসা সম্পর্কে হয়রত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ) একটি মজার গল্প লিখেন তাঁর মুসলমানের হাঁসি নামক গ্রন্থে। এই পেট ফাঁপার চিকিৎসা নামক গল্পটি এখন শুনব। এই পেট ফাঁপার চিকিৎসা থেকে আমরা অনেক জ্ঞানমূলক বিষয় জানতে পারব।
পূর্বকালে বাদশাহর দরবারে আলেমদের খুব কদর ছিল। এক বাদশাহ্ দীনী বিষয় নিয়ে তার দরবারে এক আলেমের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি একটি শিশুকে নিয়ে এসে সেই আলেমের খেদমতে আরজ করল- “হুজুর আমার এই ছেলেটির পেট ফেঁপেছে, ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। দয়া করে কিছু করুন যেন আল্লাহ পাক তাকে আরোগ্য দান করেন।” উক্ত বুযুর্গ শিশুটির পেট লক্ষ্য করে একটি ফুঁক দিলেন এবং বললেন- যাও নিয়ে যাও। ইনশা আল্লাহ্ ভাল হয়ে যাবে।”
বাদশাহ্ বিষয়টি লক্ষ্য করলেন। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি বুযুর্গকে বললেন- “হযরত! আমি আপনাকে জ্ঞানী ব্যক্তি ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি যা করলেন তার কোনো যুক্তি দেখি না। শিশুটি যন্ত্রণায় কাতর অথচ তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র একটি ফুঁক দিয়ে দিলেন। এই ফুঁ করাতে কী যায় আসে? রুগ্নদের প্রতি দয়া দেখানোই তো মহৎ ব্যক্তির লক্ষণ।”
বুযুর্গ বললেন- বাদশাহ! আপনার লক্ষণ বেশী ভাল নয়। দেশের লোক আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে। তারা আপনার বদনাম ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। জনগনের অসন্তুষ্টি মঙ্গলজনক হয় না। বাদশাহর মুখমন্ডল কালো হয়ে একেবারে যেন নূয়ে পড়লো। বুযুর্গ বললেন- তবে দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরাই শুধু বদনাম ছড়ায়। কারণ দুষ্টের দমনের জন্য আপনার কঠোরতায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারে না । এতে প্রকৃতপক্ষে আপনার মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। বাদশাহর মুখ এবার হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠল। আনন্দে তার মুখে কথার খৈ ফুটতে লাগল।
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
বুযুর্গ বললেন- কিন্তু দেশে দুষ্ট লোকদের সংখ্যাই অধিক। এরা বিদ্রোহ করলে আপনার ক্ষমতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। একথা শুনে বাদশাহর মুখমণ্ডল লাল হয়ে উঠল। ক্রোধে তিনি ফেটে পড়লেন। আসন ছেড়ে উঠে দুই হাতের আস্তিন শুটাতে শুটাতে বললেন, কে আছে আমার সঙ্গে বিদ্রোহ করবে? আমার সৈন্য আছে, অস্ত্র আছে, বিদ্রোহ দমন করতে হয় কিভাবে তাও আমার ভাল করে জানা আছে।” বুযুর্গ বললেন- দুষ্ট লোকেরা সংখ্যায় অধিক হলেও তাদের সাহস কম থাকে। বিদ্রোহ করার মত মনোবল তাদের নাই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার মত ন্যায়পরায়ন বাদশাহ ইনশা আল্লাহ শান্তিতে থাকবেন এবং দেশেও শান্তি বিরাজ করবে। এই কথা শুনে বাদশাহ শান্ত সুবোধ ছেলের মত আসনে বসে পড়লেন। তার চেহারায় প্রশান্তির ভাব ফিরে এলো। যেন তার কিছুই হয়নি।
এইবার বুযুর্গ বললেন- দেখুন বাদশাহ্ জাহাপনা! আমি আপনাকে চারটি কথা বলেছি। এর দ্বারা আপনার অবস্থা চার বার পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম কথায় লজ্জায় অপমানে আপনার চেহারা কালো হয়ে পড়ল। দ্বিতীয় কথা দ্বারা আপনি আনন্দিত হলেন। তৃতীয় কথায় আপনার মুখমন্ডল ক্রোধে লাল হয়ে উঠল। আপনি আসন ছেড়ে উঠে ছটফট করতে লাগলনে। চতুর্থ কথায় আপনার মুখমন্ডলে শান্ত ভাব ফিরে আসল। আপনি নিশ্চিন্তে আসন গ্রহণ করলেন।
“এবার চিন্তা করে দেখুন, আমি আল্লাহ পাকের এক নগন্য বান্দা। আমার কথা যদি আপনার উপর এতটা আছর করতে পারে তবে মহান আল্লাহর কালামে কি কোনো আছর নাই? তাঁর পবিত্র বাণীর প্রভাবে কি পাহাড় চূর্ণ হয়ে যেতে পারে না? তার কথা কি মানুষের দেহের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না? রোগের উপশম হবে না? তবে কেন আপনার এই ধারণা জম্মালো যে, শিশুটির দেহের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা পবিত্র কোরআনের বাণী তার উপর কোনো আছর করবে না, তার রোগ উপশম হবে না”?
বাদশাহ্ এইবার নিজের ভুল বুঝে লজ্জিত হলেন এবং তৌবা করলেন জীবনে আর এরূপ কথা বললেন না।