বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার পাস নম্বর ৩৩ কেন আমরা অনেকেই জানি না। পরীক্ষার পাস নম্বর ৩৩ হওয়ার পেছনে যে কাহিনীটি বহুল প্রচলিত তা এই প্রবন্ধে আলোচনা করার প্রয়াস চালাব।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পিত পরিবর্তন এনে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর চলে গেলেও বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমলের লর্ড ক্যানিংয়ের শিক্ষানীতি এখনো চলমান। বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এমনকি কখনো কখনো স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও কৃতকার্য হওয়ার বা পাসের সর্বনিম্ন নম্বর ধরা হয় ৩৩।
কিন্তু কেন? কেন ৩০ বা ৪০ বা ৫০ নয় কিংবা অন্য কোনো সংখ্যা নয়? এর পেছনে কি কোন কারণ বা ইতিহাস আছে?
হ্যাঁ, এর পেছনে মজার একটি গল্প বা ইতিহাস আছে।
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে পরাজিত করে বিট্রিশরা উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা দখল করে। এর ১০০ বছর পর বিট্রিশ থেকে স্বাধীনতা ফিরে পেতে প্রথম বারের মতো সফল আন্দোলন করে ১৮৫৭ সালে, যা সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ইংরেজরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ১০০ বছর সফল শাসন চালালো। কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে। ফলে শাসন ক্ষমতা চলে যায় বৃটেনের রানীর হাতে। রাজত্ব ও শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে বিট্রিশ সরকার উপমহাদেশের সমাজ ব্যবস্থার নানা সংস্কারের পরিকল্পনা করে।
ভাল নোট তৈরির সহজ নিয়ম জানতে ভিজিট করুন
এরই ধারাবহিকতায় ইংরেজ সরকার চালু করে শিক্ষা ব্যবস্থা। ১৮৫৮ সালে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো matriculation (মেট্রিকুলেইশন) পরীক্ষা চালু হয়। কিন্তু পাস নম্বর কত হবে তা নির্ধারণ নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ পড়ে যায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে। ফলে বিষয়টির পরামর্শ প্রদানের জন্য চিঠি পাঠানো হয় ব্রিটেনে। তখনকার সময়ে ব্রিটেনের স্থানীয় ছাত্রদের পাস নম্বর ছিল ৬৫।
উপমহাদেশের জনগনের প্রতি ইংরেজদের একটি ধারনা ছিল-
It was of general knowledge during that time that “the people of sub-continent were half as intellectual and efficient as compared to the British.” অর্থাৎ সে সময় ইংরেজ সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল যে, “বুদ্ধি ও দক্ষতায় উপমহাদেশের মানুষকে ইংরেজদের তুলনায় অর্ধেক মনে করা হতো।
এ কারণে ইংরেজরা উপমহাদেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য ৬৫ নম্বর এর অর্ধেক ৩২.৫% নম্বরকে পাস নম্বর হিসেবে ধার্য্য করে দেয়। এই নিয়ম ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত চালু থাকে।
১৮৬২ সালে তা গণনার সুবিধার্থে হাফ নম্বর বৃদ্ধি করে পাস নম্বর করা হয় ৩৩। সেই থেকে এই ৩৩ নম্বর-ই চলছে।
এই নিয়মটি চালু ছিল ভারত, পাকিস্থান এবং বর্তমানে বাংলাদেশেও। বর্তমান বাংলাদেশে দেশে শত শত শিক্ষার্থী প্রায় শতভাগ নম্বর পাচ্ছে, হাজার হাজার শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ গ্রেড তুলে নিচ্ছে সেখানে ৩৩ নম্বর পাসের শর্ত হলে ব্যাপারটি কেমন লাগে? বুয়েট, মেডিক্যালের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা হয় না-ই বললাম।
খুবই লক্ষ্যণীয় এবং আজব ব্যাপার হচ্ছে প্রায় দুই শতাব্দী পরেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৩৩ নম্বরে উত্তীর্ণ হওয়ার ধারাবাহিক ইতিহাস আজো বদলায়নি। এজন্য শিক্ষার মান স্বভাবতই নিম্নগামী।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পিত পরিবর্তন এনে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে তেমনি দেশের কল্যাণও বয়ে আনবে।
এবার কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এর পরিবর্তন আসবে? আমরাতো অনেক বছর থেকে অপেক্ষায় আছি আর থাকবো।
Voice Change শেখার সহজ টেকনিক জানতে ভিজিট করুন
যোগাযোগ
মো: নজরুল ইসলাম
০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮
ইমেইল: nazruld@yahoo.com