তিনটি নতুন গল্প রয়েছে আজকের এই আর্টিকেলে। এই তিনটি নতুন গল্প ভিন্ন ধর্মী জ্ঞান প্রদানে সহায়তা করবে পাঠকদেরকে। তিনটি নতুন গল্প থেকে প্রথমটি পৌরানিক তিনটি নতুন গল্প থেকে ২য়টি শিক্ষামূলক তিনটি নতুন গল্প থেকে ৩য়টি ইসলামিক।
গল্প এক
এক রাজা একদিন দেখতে চাইলেন তার রাজ্যবাসীদের ঘরে কার হুকুম চলে? স্বামীর… নাকি স্ত্রীর। তিনি রাজ্যে ঘোষণা করলেন… যার ঘরে বউ এর কথা মানা হয় সে রাজপ্রাসাদে এসে একটা করে আপেল নিয়ে যাবে। আর যার ঘরে স্বামীর কথা চলে সে পাবে একটা ঘোড়া। পরের দিন সমস্ত রাজ্য বাসী হাজির, সবাই একটা করে আপেল নিয়ে ঘরে চলে যেতে লাগলো…
রাজা ভাবলেন সন্ধ্যে হয়ে গেল এখনো কি এমন একজন কেও পাওয়া যাবে না যার ঘরে স্বামীর কথা চলে! এমন সময় একজন এলো লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য, ইয়া বড় গোঁফ। সে এসে বললো, “আমার ঘরে আমারই কথা চলে।” রাজা বেজায় খুশি হলেন তিনি বললেন, “যাও, আমার ঘোড়াশাল থেকে সব থেকে ভালো ওই কালো ঘোড়াটা তোমায় দিলাম।” লোকটা ঘোড়া নিয়ে চলে গেলো। রাজা খুশি মনে বললেন “যাক অন্ততপক্ষে একজন তো পাওয়া গেলো”। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেই লোকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে এলো এবং বললো, “রাজা মশাই আমাকে ঘোড়াটা পাল্টে দিন, আমার বউ বললো যে কালো রং অশুভ, সাদা শান্তির প্রতীক, তাই সাদা ঘোড়া দিন।” রাজা রেগে গেলেন… “তুই ঘোড়া রেখে একটা আপেল নিয়ে এখুনি আমার সামনে থেকে বিদায় হও।”
রাতের বেলা মন্ত্রী এলো, বললো”রাজা মশাই, সবাই তো আপেলই নিলো! আপেলের বদলে আপনি যদি অন্তত পাঁচ কেজি করে চাল দিতেন তো আপনার প্রজাদের কিছু সাশ্রয় হত।” রাজা বললেন, “আমি ও সেটাই ভেবেছিলাম কিন্তু বড় রানী বললো আপেলই ভালো হবে।” মন্ত্রী শুধালো, “রাজা মশাই আপনাকেও কি একটা আপেল কেটে দেবো?” রাজা লজ্জিত হয়ে বললেন, “সে কথা থাক, আগে বলো তুমি রাজসভায় এই মতামত না দিয়ে এখন কেন দিতে এসেছো এই রাতের বেলায়??” মন্ত্রীর লাজুক উত্তর, “আগামীকাল সকালেই বলতাম কিন্তু আমার বউ বললো এখনই যাও আর রাজামশাইকে বুদ্ধিটা এখনই দিয়ে এসো যাতে করে পরের বারে চাল দেওয়ার ঘোষণা দেন উনি।” রাজা স্বস্তির হাসি হেসে বললেন, “আপেলটা তুমি নিয়ে যাবে? নাকি ঘরে পাঠিয়ে দেবো?”
গল্প দুই
একটি গরু জঙ্গলে ঘাস খাচ্ছিল। হঠাৎ তাকে একটি বাঘ আক্রমণ করল। গরুটি অনেকক্ষন দৌড়ানোর পর উপায় না পেয়ে পুকুরে ঝাপ দিলো। মাত্র শুঁকিয়ে যাওয়া পুকুরটিতে কাঁদা ছাড়া কোন পানি ছিল না। গরুর পেছন পেছন বাঘটিও ঝাপ দিল। বাঘ ও গরু কাঁদায় গলা পর্যন্ত আটকে গেল। বাঘ রেগে মেগে বলে, “কিরে হারামী তুই আর লাফ দেয়ার জায়গা পেলি না? ডাঙায় থাকলে তোকে না হয় একটু কুড়মুড় করে খেতাম। এখনতো দুজনেই মরব রে।” গরু হেসে বলে, “তোমার কি মালিক আছে? বাঘ রেগে বলে, বেটা আমি হলাম বনের রাজা। আমার আবার মালিক কে। আমি নিজেইতো বনের মালিক। গরু বলে তুমি এখানেই দুর্বল। একটু পর আমার মালিক আসবে। এসে আমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে। আর তোমাকে পিটিয়ে মারবে। বাঘ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। ঠিকই সন্ধ্যা বেলায় গরুটির মালিক এসে বাঘটার মাথায় বাঁশ দিয়ে কয়েকটা বাড়ি দিয়ে মেরে গরুটিকে টেনে তুলল। গরু হাসতে হাসতে বাড়ি চলে গেল আর বাঘটি মরে একা একা পড়ে রইল।
মূলকথাঃ আমরা যারা মালিকের উপর ভরসা করি, আমাদের উপর যত বড় বিপদই আসুক না কেনো, আমাদের মালিক (আল্লাহ) ঠিকই আমাদেরকে রক্ষা করবেন। হয়তো সন্ধ্যা পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রীদের মোবাইল নম্বর জানতে ভিজিট করুন
গল্প তিন
জালালুদ্দিন রুমীর বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবী থেকে ‘বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন’ দুই ব্যক্তির একটি গল্প শোনাব।
এক দেশে ছিল এক বুদ্ধিমান। তার মাথা ভালো কাজ করলেও ধনসম্পদ কিছুই ছিল না। তার কাজই ছিল হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো। একবার সেই বুদ্ধিমান লোকটি হাঁটতে হাঁটতে এক মরুভূমিতে গিয়ে পৌঁছল। চলার পথে হঠাৎ এক গেঁয়ো পথিকের সাথে দেখা। পথিকটি একটি উটে চড়ে পথ চলছে। উটের পিঠে দুদিকে দুটি বস্তা ঝুলানো ছিল। বুদ্ধিমান লোকটি পথিককে দেখেই একটি লম্বা সালাম দিল এবং বলল: স্বাগতম! সুস্বাগতম!! তোমাকে দূর থেকে দেখেই খুব খুশী হয়েছি আমি। পায়ে হাঁটা আর ক্লান্তির কথা না হয় বাদই দিলাম ভাই, একা একা পথ চলতে গিয়ে একেবারে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এখন যতক্ষণ এক সাথে পথে চলব প্রাণখুলে দু’চারটে কথা বলতে পারব, নাকি বলো? বুদ্ধিমান লোকটা কথা শুনে পথিক খুশি হল। এরপর বলল: আমিও ভাই একা চলতে চলতে বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজে নিজেই গান গাওয়া শুরু করলাম। তবে ভাই, পায়ে হাঁটা আর উটে চড়ার মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। আসলে পায়ে হাঁটাই ভালো। তাছাড়া তোমার যদি উট, ঘোড়া বা গাধা না থাকে তাহলে তা চোরে নেবার ভয় থাকবে না; ঘাস, লতাপাতা খোঁজারও কোন চিন্তা থাকবে না। কবি ঠিকই বলেছেন-
চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, যার নেই গাধা
ঘাস পাতা খড়ের তরে মন নেই বাধা।
বুদ্ধিমান: না ভাই, এটা কেমন কথা! যদি কারো গাধা না থাকে তাহলে তো তার বোঝা নিজের মাথাতেই চাপবে। পথ যদি দূরের হয় তাহলে তো পায়েরই কষ্ট। তবে হ্যাঁ, আমার কিন্তু হেঁটে পথ চলতে তেমন খারাপ লাগে না।
এভাবে নানা বিষয়ে কথা বলতে বলতে তারা পথ চলতে লাগল। হঠাৎ বুদ্ধিমান লোকটির মন- পথিকের উটের দু’পাশে বাধা বস্তা দুটিতে কি আছে তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলো। তাই সে কৌশলে জানতে চাইল : তা ভাই, উটের বোঝা দুটি অনেক ভারী বলে মনে হচ্ছে! বস্তা দুটিতে কি বোঝাই করেছো ?
পথিক: একটিতে রেখেছি গম আর অন্যটিতে বালি আর মাটির ঢেলা।
বুদ্ধিমান: কি বললে! বালি আর মাটির ঢেলা! কিন্তু কেন, তোমার বাড়ীতে কি বালি আর মাটির ঢেলা নেই?
পথিক : তা থাকবে না কেন? আসলে ওসব আমি কোন কাজের জন্য নিচ্ছি না। এক বস্তার বেশী গম ছিল না বলে তা উটের পিঠে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছিলো না। তাই বুদ্ধিকরে আরেক বস্তা ভর্তি করলাম বালি আর মাটি দিয়ে; যাতে উটের পিঠে দু’পাশ থেকে বস্তা দুটি ঝুলে থাকে।
বুদ্ধিমান: হা:হা:হা:। আজব বুদ্ধি আবিস্কার করেছো দেখছি। একেবারে বুদ্ধির ঢেঁকি! আরে ভাই, এর চেয়ে ভালো হতো না যদি গমগুলোকে দুটি বস্তায় সমান সমান করে ঢেলে নিতে। তাহলে বস্তা উঠানো-নামানো যেমন সহজ হতো, তেমনি উটের কষ্টও কম হতো। উটওয়ালা পথিক লোকটির বুদ্ধি-সুদ্ধি আসলেই কম ছিল। তাই পথচারী সঙ্গীর কথা শুনে সে বলে উঠল:
পথিক: বাহ বাহ! সুন্দর বুদ্ধি তো তোমার! শত চিন্তা-ফিকির করেও আমার বুদ্ধি এত দুর পৌছায়নি। বোঝা যাচ্ছে, তুমি সত্যিই একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও মহাপুরুষ।
বুদ্ধিমান: না, না ওসব কিছু না। তবে ভাই এটাতো খুবই সহজ হিসাব।
পথিক: না ভাই, আমি তোমার কথা একদম মেনে নিতে পারছি না। এতোসব আক্কেল বুদ্ধি দিয়ে তুমি নিশ্চয়ই অনেক ধনসম্পদের মালিক হয়েছো। আর এখন সখের বশে হেঁটে হেঁটে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছো।
বুদ্ধিমান : না ভাই তুমি ভুল বুঝছো। সত্যি বলতে কি, এই দুনিয়ায় আমার একটা কনাকড়িও নেই। এই যে এখন তোমার সাথে চলছি, অথচ আগামীকাল আমার ভাগ্যে কি আছে, কি কাজ করব আর কিইবা খাব তাও জানি না।
পথিক: এ্যাঁ, তুমি দেখছি একেবারে নিঃস্ব, ফতুর মানুষ। কিন্তু আমি একেবারে বুদ্ধিহীন হবার পরও আমার বাড়ীতে ১০টি উট, ১০০টি ভেড়া ও ৫০টি গরু আছো। এছাড়া বাড়ী, জমি, চাকর-বাকর সবই আছে। অথচ এতো বুদ্ধি মাথায় রেখেও তুমি নিঃস্ব ফকীর? তাহলে এতোসব জ্ঞান-বুদ্ধি আর লেখাপড়ার ফায়দা কি? জ্ঞান-বুদ্ধির অর্থ যদি এই হয় যে, ফালতু খেয়াল-খুশিমতো যেদিকে মন যায় সেদিকেই পথ চলব, তাহলে সত্তর বছর মুর্খ থাকাও উত্তম। না, ভাই তোমার মত ফলহীন বুদ্ধিমানের সাথে পথ চলা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।
বুদ্ধিমান: ঠিক আছে আমি অন্য পথেই যাচ্ছি। তবে যাবার আগে বলে যাচ্ছি, তুই যেসব ধন-সম্পদ কিনেছিস, তার সবই টাকা দিয়ে কিনেছিস। এতে অহংকার করার কিছু নেই। তবে তুই যে একটা গর্ধভ তা বুঝতে আমার আর বাকী নেই।
একথা বলে পথচারী ভিন্ন পথ ধরে হাঁটা দিল। আর ঘোড়া সওয়ারী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কিছুদূর যাবার পর সে এক ডাকাতদলের খপ্পরে পড়ল। ডাকাতদের একজন পথিকের কাছে জানতে চাইল যে, সে বস্তায় করে কি নিয়ে যাচ্ছে। পথিক ডাকাতদের কথার জবাব দিতে যখন ইতস্তত করছিল, তখন এক ডাকাত চাকু বের করে বস্তা দুটির একটি একঘায়ে কেটে ফেলল। ঘটনাক্রমে বস্তাটি ছিল বালি আর মাটির ঢেলার। এসব দেখে ডাকাত দল উটওয়ালাকে কয়েকটি লাথি লাগিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল :
ডাকাত: তুই আসলেই একটা গাধা। নইলে মরুভুমিতে বাস করেও কেউ কি বালি আর ঢেলা উটের ওপর বহন করে নিয়ে যায়? ডাকাতরা চলে যেতেই পথিক তার গমের বস্তা হাতছাড়া না হওয়াতে হাসিতে ফেটে পড়ল। আনন্দ উল্লাসে বলতে লাগল:
পথিক : এরকম বোকামী হাজার বার করাও ভালো। বোকার মতো বালি আর ঢেলা বোঝাই না করলে আমার কষ্টের উপার্জন গিয়ে পড়তো ডাকাতদের হাতে ।
ওই দিন থেকে বোকা লোকটি একশো উট বোঝাই করলেও একপাশে গম ও অন্যপাশে বালি বোঝাই করতো। কারো বুদ্ধি পরামর্শে কান দিতো না। মানুষ তার বুদ্ধির বহর দেখে হাসি-তামাশা করলে জবাবে সে বলতো, আমি এমন কিছু জানি, যা তোমরা জানো না।
বন্ধুরা, গল্পটি থেকে আমরা দুটি বিষয় শিক্ষা নিতে পারি। প্রথমত : কেবল বুদ্ধিমান হলেই চলে না, সে বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর জন্য পরিশ্রম করতে হয়। নইলে অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। অন্যদিকে বোকামী করার পরও ভাগ্য গুনে দু’একবার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া গেলেও বোকামীকে কেউই পছন্দ করে না। তাই আমাদের সবাইকে বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী হতে হবে।
তিন ধরণের ৩টি মজার গল্প পড়তে চাইলে নিমিষেই পড়ে নিন আজকের গল্পের আসরের তিনটি রকমারি মজার গল্প যাতে রয়েছে ভিন্ন ধরনের আনন্দ।
One Comment
Md Nazrul Islam
Hello