গুরুর শিক্ষা নিয়ে আমরা অনেক কাহিনী শুনে থাকি। আজ আমরা পাঠকদের জন্য অত্যন্ত সুন্দর গুরুর শিক্ষা সম্পর্কে একটি গল্প শোনাব। গুরুর আদেশ মেনে চললে মানুষের কি পরিমাণ উপকার হয় আজকের এই গুরুর শিক্ষা গল্প থেকে আমরা জানতে পারব।
হযরত সুলতান নিজামুদ্দীন (রঃ) এর যামানায় দিল্লীতে এক হিন্দু সাধু বাস করতেন। তিনি এমন এক অনুশীলন করেছিলেন যে রোগীর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে তার রোগ দূর হয়ে যেত। একবার হযরত সুলতান নিজামুদ্দীন (রঃ) এর অসুখ হলো। তিনি মাঝে মাঝে বেহুশ হয়ে পড়তেন । হুশ হওয়ার পর খাদেমগণ একবার আরজ করলেন যে, যদি অনুমতি দান করেন তবে অমুক সাধুর কাছে হযরতের খাট কাঁধে উঠিয়ে নিয়ে যাব। সে দৃষ্টির মাধ্যমে রোগ দুর করতে পারে। হযরত বললেন, ‘সাবধান! এরূপ করিও না। তাহলে লোকদের আকীদা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে’। কিন্তু পীরের প্রতি মুরীদের মহব্বত হয়ে থাকে এশক পর্যায়ের।
হযরত যখন আবার বেহুশ হয়ে পড়লেন তখন মুরীদগণ এত পেরেশান হয়ে পড়লেন যে, হযরতের খাট উঠিয়ে সাধুর বাড়িতে হাজির করলেন এবং ভাবলেন এটা হযরতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ার মাফ চেয়ে এর মীমাংসা করে নেয়া যাবে। সাধু দেখলেন এত বড় ব্যক্তিত্ব তার বাড়ীতে এসে উঠেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সব কাজ ফেলে রেখে ছুটে গেলেন হযরতের খাটের কাছে এবং দৃষ্টি দিতেই এমনভাবে রোগ দূর হয়ে গেল যে, হযরত একেবারে উঠে বসলেন। মনে হল যেন কোন রোগই ছিল না। তিনি দেখলেন যে এটা সাধুর বাড়ী। বুঝতে পারলেন, এরা আমার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
তাই কাউকে কিছু বললেন না। বরং তিনি সেই সাধুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মধ্যে এই শক্তি কিসের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে; কোন আমলের দ্বারা তুমি এই যোগ্যতা অর্জন করেছ, বল দেখি? সাধু আরজ করলেন, ‘‘আমার মধ্যে শুধু একটি বস্তু আছে যা আমার গুরু আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আর সেটা হলে এই যে, তিনি বলেছিলেন, ‘সব সময় নফসের বিরুদ্ধে চলিও; অর্থাৎ তোমার মন যে কাজটি করতে চায় সে কাজটি করিও না, আর যে কাজটি করতে চায় না সেই কাজটি করিও। এই একটি মাত্র অভ্যাসের দ্বারা আমার নফসের মধ্যে এমন এক শক্তি সৃষ্টি হয়েছে যার দ্বারা আমি ‘তাছাররুফ’ করে রোগ দূর করে দেই।’’
এই কথা শুনে হযরত সুলতানজী জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আচ্ছা বল দেখি তোমার কি মুসলমান হতে মন চায়?’’ সাধু আরজ করলেন না, ‘সেটা চায়না’। হযরত বললেন, ‘‘তাহলে তোমার গুরুর শিক্ষার উপর আমল কর?’’ সাধু চিন্তায় পড়ে গেল। এদিকে হযরত উপকারের বদলে উপকারের চিন্তায় দোয়া করতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ্, সে আমার উপকার করেছে, আমিও তার উপকার করতে চাই। সে আমার শরীরের রোগ দূর করেছে, আমি তার রূহানী রোগ কুফুরী দূর করতে চাই। তুমি সাহায্য কর।
সাধু আর ঠিক থাকতে পারলেন না, একটি ঘুর্ণিঝর খেলে গেল তার অন্তরে। সে তৎক্ষণাৎ বলে উঠল- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।’
(আল-এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খন্ড-৪, প্রষ্ঠা- ৩৪৪)
দ্রব্যগুণ ও টোটকা চিকিৎসা শিখতে ভিজিট করুন
০১৭১৬-৩৮৬৯৫৮