আল্লাহর উপর আস্থা (এক)
কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন। আশা করছি এই কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প পাঠ করে সবাই উপকৃত হবেন। গল্প মানব মনে আনন্দ বা বেদনা উপলব্দি করাতে সহায়ক।
সমুদ্রের মাঝখানে এক জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সেই জাহাজের বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী ভাসতে ভাসতে এক নির্জন দ্বীপে এসে পৌছালো। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই সে আল্লাহর কাছে প্রাণখুলে ধন্যবাদ জানালো তার জীবন বাঁচানোর জন্যে। প্রতিদিন সে দ্বীপের তীরে এসে বসে থাকতো যদি কোনো জাহাজ সেদিকে আসে এই আশায়। কিন্তু প্রতিদিনই তাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এরই মধ্যে সে সমুদ্রতীরে থাকার জন্য একটা ছোট একটি ঘর তৈরি করল। সমুদ্রের মাছ শিকার করে এবং বন থেকে ফলমূল খেয়ে সে বেঁচে থাকলো। একদিন সে খাবারের খোঁজে বনের গভীরে প্রবেশ করল। বন থেকে সে যখন ফিরল তখন দেখলো যে, তার রান্না করার চুলা থেকে আগুন লেগে পুরো ঘরটিই ছাই হয়ে গিয়েছে এবং কালো ধোঁয়ায় আকাশ ভরে গিয়েছে। লোকটি চিৎকার করে উঠলো, ‘হায় আল্লাহ, তুমি আমার এত কষ্টের ঘরটি শেষমেশ পুড়িয়েই দিলে!’ এই বলে সে মাতম করতে লাগল আর নিয়তির উপর তিরষ্কার করতে করতে ঘুমিয়ে গেল। পরদিন সকালে এক জাহাজের আওয়াজে তার ঘুম ভাঙলো। জাহাজটি সেই দ্বীপের দিকে তাকে উদ্ধার করার জন্যই আসছিলো। সে অবাক হয়ে বললো, ‘তোমরা কিভাবে জানলে যে আমি এখানে আটকা পরে আছি!’ জাহাজের ক্যাপ্টেন জানালো, ‘তোমার জ্বালানো ধোঁয়ার সংকেত দেখেইতো আমরা তোমাকে উদ্ধার করতে এসেছি।’ লোকটি তখন বুঝতে পারল যে, ঘরে আগুন না লাগলে আমি কখনো বাড়ীতে ফিরতে পারতাম না। আল্লাহ যা করেন তা মানুষের কল্যানের জন্যই করেন। আমরা কেবল বুঝতে পারি না।
অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
আল্লাহর উপর আস্থা (দুই)
কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।
একজন বয়স্ক রাজমিস্ত্রী তার কাজ থেকে অবসর নিতে চাইলো। তাই সে তার মালিকের কাছে গিয়ে বললো, ’বস, আমি এই বাড়ি বানানোর কাজ থেকে অবসর নিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সাথে সময় কাটাতে চাই।‘ অনুগ্রহপূর্বক আমাকে অবসর দিন। তার মালিক এতে কিছুটা দুঃখ পেল কারণ সে ছিলো সবচেয়ে দক্ষ ও কর্মঠ রাজমিস্ত্রী। সে বললো, ‘ঠিক আছে, কিন্তু তুমি কি চলে যাওয়ার আগে আর একটিমাত্র বাড়ি বানাতে আমাদের সাহায্য করবে?’ বয়স্ক রাজমিস্ত্রী এই প্রস্তাবে স্বানন্দে রাজী হয়ে গেল। কিন্তু কাজ শুরু করার পর দেখা গেল তার মন সেখানে ছিল না এবং সে সবসময় তার অবসরের কথা ভেবে অন্যমনস্ক থাকতো। সবসময় সে বাড়ির চিন্তা করতো। তাই এর আগে সে যত কাজ করেছিলো এই কাজটি তার করা কাজর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ কাজ হয়ে গেল। যখন সে বাড়িটি তৈরি করা শেষ করলো তখন তার মালিক বাড়িটি দেখতে এলো এবং বৃদ্ধের হাতে বাড়ির চাবি দিয়ে বললো, ‘এটা এখন থেকে তোমার বাড়ি, আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি এটা একটা ছোট্ট উপহার।‘ এই কথা শুনে বৃ্দ্ধ আফসোস করে উঠলো! সে মনে মনে ভাবলো, ‘হায় হায়! যদি আমি শুধু একবার জানতাম যে আমি আমার নিজের বাড়ি তৈরি করছি! তাহলে এটা আমার জীবনে করা সবচেয়ে ভাল কাজ হতো!
ভাই বড় ধন রক্তের বাধনে যদিও পৃথক হয় নারীর কারণে
কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।
এক গ্রামে একটি কুয়া ছিল। তা ছিল ভূতুরে। গ্রামের লোকজন যখনই পানি তুলতে কুয়াতে বালতি ফেলত তখন কেউ একজন বালতি টেনে ধরত আর পানি রেখে দিত ফলে বালতি শূন্য অবস্থায় উঠে আসত। এমন অদ্ভুতকাণ্ড বারবার ঘটায় গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল যে, কুয়াটি জ্বীনের বাসা। এখানে ভয়ংকর একটা জ্বীন বাস করে। কিন্তু এভাবে আর কয়দিন চলে? গ্রামের মানুষদের পানি সংগ্রহ করতে হবে। তারা বলল এর একটা বিহিত করা দরকার। কিন্তু কুয়াতে নামবে কে? কেউ সহজে রাজি হচ্ছে না। এমন সময় এক যুবক কুয়াতে নামতে রাজি হলো। সে বলল, আমি কুয়াতে নামব। আমার কোমরে রশি বেঁধে নামিয়ে দিবেন। তবে শর্ত হল রশির অপর প্রান্তে অবশ্যই আপনাদের সাথে আমার ভাইকে থাকতে হবে। গ্রামের লোকজন তার শর্ত শুনে বেশ আশ্চর্য হলো। গ্রামের শক্তিশালী সুঠাম এতগুলো মানুষ থাকতে তার ভাইকে লাগবে কেন? প্রথমে তারা যুবককে বিষয়টা বোঝাতে চেষ্টা করল। তবুও তার এক কথা অবশ্যই তার ভাইকে সাথে রাখতে হবে। তার ভাইকে খুঁজে আনা হলো। সবাই মিলে যুবককে কুয়াতে নামিয়ে দিল। ভেতরে গিয়ে সে দেখল, কুয়াতে একটি বানর।
এই বানরটিই বালতি উল্টিয়ে দিত। যুবক বানরটিকে ধরে কাঁধে বসিয়ে রশি টানার নির্দেশ দিল। বানরটি ছিল যুবকের কাঁধে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচর হল বানরের চেহারা। হঠাৎ করে ভূতদর্শন চেহারা দেখে সবাই মনে করল, জ্বীনটা উঠে আসছে। ওমনি রশি ফেলে সব দিল ভূদৌড়। কিন্তু একজন রশি ছাড়ল না। সে হল যুবকের ভাই। বহুকষ্টে ভাইকে টেনে তুলল উপরে। ফলে তার ভাই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেল। তখন সবাই বুঝতে পারল কেন সে ভাইকে রশি ধরার শর্ত দিয়েছিল। কারণ, পৃথিবীতে সবাই বিপদের সময় দূরে সরে গেলেও ভাই সরবে না।
দরবেশের জবাব
একবার এক নাস্তিক এক দরবেশের কাছে এসে চারটি প্রশ্ন করে তার জবাব জানতে চাইল। প্রশ্ন চারটি হলো-
১. বলা হয় যে, আল্লাহ সব জায়গায়ই আছেন, যদি থেকেই থাকেন তবে আমরা তাকে দেখতে পাই না কেন?
২. যা দেখা যায় না তা আমি মানি না।
৩. গোটা জ্বীন জাতি আগুনের তৈরি। এদেরকে দোজখের আগুনে কিভাবে পুড়বে যেহেতু জ্বীন জাতি আগুনের তৈরি? অর্থাৎ আগুনকে আগুন দিয়ে কিভাবে পোড়ান যাবে।
৪. বলা হয় যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। তাই যদি হয়, তাহলে মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাবে কেন? দরবেশ নাস্তিক লোকটির প্রশ্নগুলো শুনে কৃত্রিম ক্রোধ দেখিয়ে একটি মাটির ঢেলা তার দিকে ছুড়ে মারলেন। লোকটির মাথায় আঘাত লেগে কেটে গেল। আহত লোকটি কাজির দরবারে দরবেশের বিরুদ্ধে নালিশ করল। কাজি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে দরবেশকে লোকটির মাথায় এভাবে আঘাত করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। দরবেশ উত্তরে বললেন : আমি তো তার চারটি প্রশ্নের জবাবই দিয়েছি মাত্র; তাকে আহত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। ঢিল ছুড়ে কিভাবে প্রশ্ন চারটির জবাব দেয়া হলো এ রহস্য উদঘাটন করার অনুরোধ করা হলে দরবেশ জবাব দিলেন যে, লোকটির প্রশ্ন হলো : আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান থাকলেও তাকে দেখা যায় না কেন? জবাব হলো : ঢিলের আঘাতে এ ব্যক্তি ব্যথা পেয়েছে, বলছে। ব্যথার যদি অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তা দেখা যায় না কেন? : ব্যথা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেমন তা চোখে দেখা যায় না তেমনি আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও থাকে চর্মচক্ষে দেখা যায় না। তার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো : যা দেখা যায় না তা আমি মানি না। চোখে না দেখে যদি ব্যথার কথা বিশ্বাস করা যায় তবে আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করার কী অসুবিধা? তার তৃতীয় প্রশ্ন হলো : শয়তান ও জ্বীন আগুনের তৈরি হয়েও দোজখের আগুনে পুড়বে কিভাবে? : মানুষ তো মাটির তৈরি। মাটির তৈরি মানুষকে যদি মাটির ঢেলার আঘাতে কষ্ট দেয়া যায়, তবে আগুনের তৈরি জ্বীনকে আগুনে পোড়ান কি তেমন কষ্টকর? তার চতুর্থ প্রশ্ন হলো : আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না, তাহলে মানুষের কৃতকর্মের জন্য মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে কেন? : আল্লাহর ইচ্ছায়ই যখন সব হয় তবে ঢিল ছোড়া, তার গায়ে আঘাত লাগা, রক্তপাত ও ব্যথা সবইতো তার ইচ্ছায়ই হয়েছে, সুতরাং এ ব্যাপারে অভিযোগ করার কী আছে? এরও যদি অভিযোগ ও বিচার চলে এবং শাস্তি বর্তায়, তবে মানুষের কৃতকর্মের বিচার, সুফল ও কুফল ভোগ কেন মিথ্যা হবে? মানুষ সৃষ্ট বলেই তার দৈহিক ও জৈব গতিবিধি এবং মানসিক বৃত্তি ও বুদ্ধিমত্তা সীমিত। সাধনা বলে মানুষ যতই ঊর্ধ্বে উঠুক না কেন, অসীমের জ্ঞান লাভ করা তার পক্ষে অসম্ভব। কারণ তার ধারণা, ক্ষমতা ও আধারই অসম্পূর্ণ সৃষ্ট। সুতরাং সীমিত। স্রষ্টার জ্ঞান অসীম আর সৃষ্টির সাধনালব্ধ জ্ঞান সামান্য মাত্র। আল্লাহ তার অসীম জ্ঞান থেকে সামান্য মাত্র মানুষকে দিয়েছেন। সুতরাং সবই আল্লাহর কুদরত। আমরা যদি কেবলমাত্র মিথ্যা দূর করে সত্য গ্রহণ করতে পারি, তবেই স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থক হবে।
কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।
দরবেশ নাস্তিক লোকটির প্রশ্নগুলো শুনে কৃত্রিম ক্রোধ দেখিয়ে একটি মাটির ঢেলা তার দিকে ছুড়ে মারলেন। লোকটির মাথায় আঘাত লেগে কেটে গেল। আহত লোকটি কাজির দরবারে দরবেশের বিরুদ্ধে নালিশ করল। কাজি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে দরবেশকে লোকটির মাথায় এভাবে আঘাত করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। দরবেশ উত্তরে বললেন : আমি তো তার চারটি প্রশ্নের জবাবই দিয়েছি মাত্র; তাকে আহত করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। ঢিল ছুড়ে কিভাবে প্রশ্ন চারটির জবাব দেয়া হলো এ রহস্য উদঘাটন করার অনুরোধ করা হলে দরবেশ জবাব দিলেন যে, লোকটির প্রশ্ন হলো : আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান থাকলেও তাকে দেখা যায় না কেন? জবাব হলো : ঢিলের আঘাতে এ ব্যক্তি ব্যথা পেয়েছে, বলছে। ব্যথার যদি অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে তা দেখা যায় না কেন? : ব্যথা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেমন তা চোখে দেখা যায় না তেমনি আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও থাকে চর্মচক্ষে দেখা যায় না। তার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো : যা দেখা যায় না তা আমি মানি না। চোখে না দেখে যদি ব্যথার কথা বিশ্বাস করা যায় তবে আল্লাহকে না দেখে বিশ্বাস করার কী অসুবিধা? তার তৃতীয় প্রশ্ন হলো : শয়তান ও জ্বীন আগুনের তৈরি হয়েও দোজখের আগুনে পুড়বে কিভাবে? : মানুষ তো মাটির তৈরি। মাটির তৈরি মানুষকে যদি মাটির ঢেলার আঘাতে কষ্ট দেয়া যায়, তবে আগুনের তৈরি জ্বীনকে আগুনে পোড়ান কি তেমন কষ্টকর? তার চতুর্থ প্রশ্ন হলো : আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই ঘটে না, তাহলে মানুষের কৃতকর্মের জন্য মানুষকে শাস্তি দেয়া হবে কেন? : আল্লাহর ইচ্ছায়ই যখন সব হয় তবে ঢিল ছোড়া, তার গায়ে আঘাত লাগা, রক্তপাত ও ব্যথা সবইতো তার ইচ্ছায়ই হয়েছে, সুতরাং এ ব্যাপারে অভিযোগ করার কী আছে? এরও যদি অভিযোগ ও বিচার চলে এবং শাস্তি বর্তায়, তবে মানুষের কৃতকর্মের বিচার, সুফল ও কুফল ভোগ কেন মিথ্যা হবে? মানুষ সৃষ্ট বলেই তার দৈহিক ও জৈব গতিবিধি এবং মানসিক বৃত্তি ও বুদ্ধিমত্তা সীমিত। সাধনা বলে মানুষ যতই ঊর্ধ্বে উঠুক না কেন, অসীমের জ্ঞান লাভ করা তার পক্ষে অসম্ভব। কারণ তার ধারণা, ক্ষমতা ও আধারই অসম্পূর্ণ সৃষ্ট। সুতরাং সীমিত। স্রষ্টার জ্ঞান অসীম আর সৃষ্টির সাধনালব্ধ জ্ঞান সামান্য মাত্র। আল্লাহ তার অসীম জ্ঞান থেকে সামান্য মাত্র মানুষকে দিয়েছেন। সুতরাং সবই আল্লাহর কুদরত। আমরা যদি কেবলমাত্র মিথ্যা দূর করে সত্য গ্রহণ করতে পারি, তবেই স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সার্থক হবে।
আমরা অজান্তেই মা-বাবাকে কষ্ট দেই
আব্বা আমার টাকা লাগবে, কত টাকা? ৫০০০ হাজার টাকা। কি করবি এত টাকা দিয়ে? ঈদের শপিং করবো। আব্বা আমার কথা শুনে আর কিছু না বলে, আমার হাতে ৫০০০ টাকা তুলে দিলো। টাকা গুলি পেয়ে তো আমার আনন্দের সিমা নেই। এবার মন খুঁলে শপিং করতে পারবো। খুশিতে লুঙ্গি ড্যান্স দিলাম। তারপর টাকাগুলো লুকিয়ে রেখে চলে আসলাম বন্ধুদের আড্ডাতে। সবাইকে তো বলতে হবে, এবার আমার ঈদের বাজেটটা কি হবে। সবার থেকে এবার আমার ঈদের বাজেট বেশি, বন্ধুরাও সবাই বাহবা দিলো। সন্ধার আগে বাসায় ফিরলাম, ইফতার করে নামাজ পড়ে আর বাইরে বের হলাম না। শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে চ্যাট করছিলাম। এমন সময় পাশের রুম থেকে বাবা-মার চাপা কন্ঠ ভেসে আসলো কানে।
মা: ওগো শুনছো?
বাবা: হ্যাঁ বলো।
মা:তুমি রহিমকে সব টাকা দিয়ে দিলে এবার কি দিয়ে শপিং করবা আর ঈদের বাজারও তো করতে হবে, কিছুই তো করা হয়নি। ৫০০০ টাকাই ছিলো। ছেলের কথায় সেটাও বের করে দিলে।
বাবা: চিন্তা করো না, কারো কাছ থেকে ধার করে নিবো টাকা, আর রহিমতো এখন কলেজে উঠেছে বড় লোক ছেলেদের সাথে তাকে মিশতে হয়। তাদের মতন না হলে চলে।
মা: তাই বলে সব টাকা দিয়ে দিবা, এখন যদি টাকা না পাও তাহলে কি ঈদ আর চুলা বন্ধ করে রাখবো।
বাবা: তুমি অযথা চিন্তা করছো, কিছু একটা ঠিক ম্যানেজ করে নিবো, আর আমাদের তো সব কিছুই রহিমের জন্য। তো রহিমকে দিবনাতো কাকে দিবো বলো। আর রহিমতো আমাদেরই ছেলে, বড় হয়ে দেখবা আমাদের কষ্টটাকে ঠিকই মুছে দিবে।
আব্বার মুখে কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম। নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে আজ। শুধু নিজের ভালোর জন্য, বাবা-মাকে এতটা কষ্ট দেই আমি। যে বাবা-মা আমাকে এত ভালোবাসে তাদেরকে আমি এতদিন অবহেলা করে এসেছি, শুধু নিজের দিকটাই ভেবে এসেছি। ইচ্ছে করছে এখনই বাবাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদি কিন্তু বড় হয়ে গেছি, তাই কাঁদতেও পারছি না। সেদিন রাতটা কোনো রকমে কাটালাম। পরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম কাজের সন্ধ্যানে। পরিকল্পনা করলাম এবার আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আব্বা ও মাকে কাপড় কিনে দিবো। আর ঈদের যাবতীয় খরচাবলিও আমি নিজের কামাই করা টাকায় করবো। রোজা ছিলাম তাই মা খাওয়ার জন্য চিন্তা করতো না, রোজ সকালে বের হতাম আর বিকেলে ফিরতাম। বাড়ি ফিরলে মা একটু বকা দিতো কিন্তু আমি কিছু বলতাম না। কারণ তখন আমি দিন মজুরি খাটতাম। শুধু বাবা-মায়ের জন্য। টানা পনেরো দিন মজুরি খাটলাম। রাতে শুয়ে আছি, এমন সময় মা আসলো।
মা: রহিম তুই কাপড় কেনার জন্য টাকা নিলি কিন্তু কাপড় কিনলি না তো?
আমি: কিনবো মা এখনো তো ৪দিন সময় আছে।
মা: কই সময় আছে? ঈদ তো চলেই আসলো।
আমি: মা, তুমি আর বাবা কি কিনলে দেখালে না তো
মা: আমরা আর কিনে কি করবো বল বাবা, তুই কিনলেই আমাদের হবে। আচ্ছা ঘুমা, অনেক রাত হয়ে গেছে বলেই মা চলে গেলো।
আমি: মনে মনে বললাম, মা তোমরা সত্যিই খুব স্বার্থপর, তবে সেটা নিজের ক্ষেত্রে না। আমাকে উজাড় করে দিতে। ঈদের আর মাত্র ৩দিন বাকি, দেখলাম ঈদের কাঁচা বাজারও কিছু কেনা হয়নি তাই মাকে বলে সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম আমার মজুরির টাকা ৪০০০ আর বাবার দেয়া ৫০০০ টাকা নিয়ে। প্রথমে মায়ের জন্য একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম, বাবার জন্য লুঙ্গি-পাঞ্জাবি আর তারপরে আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর প্যান্ট। এছাড়াও ঈদের টুকিটাকি বাজার করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে আসলো বুঝতেই পারলাম না। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা হলাম। মা আমার হাতে এতগুলো ব্যাগ দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
মা: রহিম তুই কোথায় গেছিলি, বাবা?
আমি: সব বলবো আগে ঘরে চলো, আব্বা কই?
মা: ঘরেই আছে। আমি: চলো তাহলে মা: কি তোর ব্যাগে?
আমি: আছে কিছু আগে চলো তো। বাবা-মাকে বসালাম। এবার ব্যাগ থেকে প্রথমে শাড়িটা বের করে মায়ের গায়ে ঠেকিয়ে বললাম, মা দেখো তো কেমন লাগছে, খুব সুন্দর মানাবে তোমাকে। বাবা তোমার জন্যও আছে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি ।
মা: রহিম এসব কোথায় পেলি?
আমি: মা তুমি না, শুধু প্রশ্ন করো। আগে বলো কেমন হয়েছে, কোনোদিন তো তোমাদের জন্য কিনি নাই। খারাপ হলেও কিছু করার নাই। এসব মুখ বুজে বাবা দেখছিলো।
এবার বললো বাবা: রহিম এসব কোথায় থেকে আনলি এত কাপড় ঈদের বাজার টাকা কোথায় পেলি তুই।
আমি: আব্বা, তুমি রাগ করবা না তো।
বাবা: না বল।
আমি: আমি ১৫ দিন রফিক আংকেলের সাথে দিন মজুরের কাজ করেছিলাম, তার থেকে ৪০০০ টাকা পেয়েছি আর তাই দিয়ে তোমাদের জন্য সামান্য কিছু কিনে এনেছি। কথা গুলো শুনে বাবা রেগে গেলো। আমাকে একটা থাপ্পড়ও মারলো, খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না, কে বলেছে তোকে রোজা মুখে কাজ করতে, আমি কি মরে গেছি। তুই কাজ করবি, জীবনে অনেক সময় পাবি তখন কাজ করিস এখন যদি আর কোনোদিন কাজ করিস তাহলে তখন আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না দেখে নিস। বলেই আব্বা রাগ করে চলে গেলো।
ভেবেছিলাম আব্বা অনেক খুশি হবে কিন্তু আব্বা তো রেগে গেলো। মাও কোনো কথা না বলে চলে গেলো। সব কিছু অগুছালো অবস্থাতেই পড়ে রইলো। এশার নামাজ শেষ করে মন খারাপ করে শুয়ে আছি, এমন সময় আব্বা আসলো।
বাবা: রহিম, খেয়েছিস?
আমি: খাবো না, ক্ষুধা নেই।
বাবা: আয় খেতে আয়।
আমি আব্বাকে খুব ভয় পাই তাই বেশি কিছু না বলে চলে আসলাম। কিছু না বলে মুখ বুজে খাবার খেয়ে আবার চলে আসলাম। রাত প্রায় ১১টা বাজে, দেখি আব্বা ও মা দুজনেই রুমে আসলো।
বাবা: কিরে আমার লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি দিবি না।
আমি: তাড়াতাড়ি করে উঠে ব্যাগ থেকে বার করে বাবার হাতে দিলাম। দেখি আব্বা কাঁদছে।
আমি: আব্বা আমি কি ভুল কিছু করে ফেলেছি।
বাবা: না রে বাবা তুই ভুল কিছু করিস নি, আজকে সত্যি আমার নিজেকে একজন বাবা হিসেবে গর্ভবোধ হচ্ছে যে, আমি তোর মতন একটা ছেলের বাবা। আজকে আমি অনেক খু্শি যে, আমার ছেলে প্রথম রোজকারের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য ঈদের মার্কেট করেছে, সংসারের জন্য বাজার এনেছে। তুই তখন বলেছিলিস না যে, পছন্দ হইছে কিনা, সারা বাজার খুঁজলেও এগুলোর থেকে আর পছন্দের কিছু পাবি না। এগুলো আমার কাছে অনেক দামিরে। অনেক যত্ন করে রেখে দিবো। কারণ এগুলো যে আমার ছেলের প্রথম রোজকারের টাকায় কেনা। বলেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জীবনে এই প্রথম বড় হওয়ার পর আমি বাবার বুকে মাথা দিলাম। খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো যে, আমি আজকে দুনিয়ার সব থেকে বড় সুখি মানুষ, সব চেয়ে বড় বিজয়ী। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, আসলে বাবা-মা কি জিনিস। এদের কে খুশি করতে দামি কিছু লাগে না। এরা অল্পতেই খুশি যদি সেটা দেয়া হয় ভালোবাসার সংস্পর্শ দিয়ে। সুখে থাকুক এসব মানুষগুলি যারা সারাজীবন নেয়া থেকে দেয়াটাকেই নিজের খুশি বলে ধরে নেয়।
কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।
বাবা: হ্যাঁ বলো। তুমি রহিমকে সব টাকা দিয়ে দিলে এবার কি দিয়ে শপিং করবা আর ঈদের বাজারও তো করতে হবে, কিছুই তো করা হয়নি। ৫০০০ টাকাই ছিলো। ছেলের কথায় সেটাও বের করে দিলে।
বাবা: চিন্তা করো না, কারো কাছ থেকে ধার করে নিবো টাকা, আর রহিমতো এখন কলেজে উঠেছে বড় লোক ছেলেদের সাথে তাকে মিশতে হয়। তাদের মতন না হলে চলে। মা: তাই বলে সব টাকা দিয়ে দিবা, এখন যদি টাকা না পাও তাহলে কি ঈদ আর চুলা বন্ধ করে রাখবো। অনলাইনে ফ্রি ইনকাম করার সহজ পদ্ধতি জানতে ভিজিট করুন
বাবা: তুমি অযথা চিন্তা করছো, কিছু একটা ঠিক ম্যানেজ করে নিবো, আর আমাদের তো সব কিছুই রহিমের জন্য। তো রহিমকে দিবনাতো কাকে দিবো বলো। আর রহিমতো আমাদেরই ছেলে, বড় হয়ে দেখবা আমাদের কষ্টটাকে ঠিকই মুছে দিবে। আব্বার মুখে কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম। নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে আজ। শুধু নিজের ভালোর জন্য, বাবা-মাকে এতটা কষ্ট দেই আমি। যে বাবা-মা আমাকে এত ভালোবাসে তাদেরকে আমি এতদিন অবহেলা করে এসেছি, শুধু নিজের দিকটাই ভেবে এসেছি। ইচ্ছে করছে এখনই বাবাকে জড়িয়ে ধরে একটু কাঁদি কিন্তু বড় হয়ে গেছি, তাই কাঁদতেও পারছি না। সেদিন রাতটা কোনো রকমে কাটালাম। পরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লাম কাজের সন্ধ্যানে। পরিকল্পনা করলাম এবার আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আব্বা ও মাকে কাপড় কিনে দিবো। আর ঈদের যাবতীয় খরচাবলিও আমি নিজের কামাই করা টাকায় করবো। রোজা ছিলাম তাই মা খাওয়ার জন্য চিন্তা করতো না, রোজ সকালে বের হতাম আর বিকেলে ফিরতাম। বাড়ি ফিরলে মা একটু বকা দিতো কিন্তু আমি কিছু বলতাম না। কারণ তখন আমি দিন মজুরি খাটতাম। শুধু বাবা-মায়ের জন্য। টানা পনেরো দিন মজুরি খাটলাম। রাতে শুয়ে আছি, এমন সময় মা আসলো।
মা: রহিম তুই কাপড় কেনার জন্য টাকা নিলি কিন্তু কাপড় কিনলি না তো?
আমি: কিনবো মা এখনো তো ৪দিন সময় আছে।
মা: কই সময় আছে? ঈদ তো চলেই আসলো।
আমি: মা, তুমি আর বাবা কি কিনলে দেখালে না তো
মা: আমরা আর কিনে কি করবো বল বাবা, তুই কিনলেই আমাদের হবে। আচ্ছা ঘুমা, অনেক রাত হয়ে গেছে বলেই মা চলে গেলো। মনে মনে বললাম, মা তোমরা সত্যিই খুব স্বার্থপর, তবে সেটা নিজের ক্ষেত্রে না। আমাকে উজাড় করে দিতে। ঈদের আর মাত্র ৩দিন বাকি, দেখলাম ঈদের কাঁচা বাজারও কিছু কেনা হয়নি তাই মাকে বলে সকাল সকাল বের হয়ে গেলাম আমার মজুরির টাকা ৪০০০ আর বাবার দেয়া ৫০০০ টাকা নিয়ে। প্রথমে মায়ের জন্য একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম, বাবার জন্য লুঙ্গি-পাঞ্জাবি আর তারপরে আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর প্যান্ট। এছাড়াও ঈদের টুকিটাকি বাজার করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে আসলো বুঝতেই পারলাম না। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা হলাম। মা আমার হাতে এতগুলো ব্যাগ দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
মা: রহিম তুই কোথায় গেছিলি, বাবা?
আমি: সব বলবো আগে ঘরে চলো, আব্বা কই?
মা: ঘরেই আছে। আমি: চলো তাহলে মা: কি তোর ব্যাগে?
আমি: আছে কিছু আগে চলো তো। বাবা-মাকে বসালাম। এবার ব্যাগ থেকে প্রথমে শাড়িটা বের করে মায়ের গায়ে ঠেকিয়ে বললাম, মা দেখো তো কেমন লাগছে, খুব সুন্দর মানাবে তোমাকে। বাবা তোমার জন্যও আছে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি ।
মা: রহিম এসব কোথায় পেলি?
আমি: মা তুমি না, শুধু প্রশ্ন করো। আগে বলো কেমন হয়েছে, কোনোদিন তো তোমাদের জন্য কিনি নাই। খারাপ হলেও কিছু করার নাই। এসব মুখ বুজে বাবা দেখছিলো। এবার বললো বাবা: রহিম এসব কোথায় থেকে আনলি এত কাপড় ঈদের বাজার টাকা কোথায় পেলি তুই।
আমি: আব্বা, তুমি রাগ করবা না তো। বাবা: না বল। আমি: আমি ১৫ দিন রফিক আংকেলের সাথে দিন মজুরের কাজ করেছিলাম, তার থেকে ৪০০০ টাকা পেয়েছি আর তাই দিয়ে তোমাদের জন্য সামান্য কিছু কিনে এনেছি। কথা গুলো শুনে বাবা রেগে গেলো। আমাকে একটা থাপ্পড়ও মারলো, খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না, কে বলেছে তোকে রোজা মুখে কাজ করতে, আমি কি মরে গেছি। তুই কাজ করবি, জীবনে অনেক সময় পাবি তখন কাজ করিস এখন যদি আর কোনোদিন কাজ করিস তাহলে তখন আমার থেকে খারাপ আর কেও হবে না দেখে নিস। বলেই আব্বা রাগ করে চলে গেলো। ভেবেছিলাম আব্বা অনেক খুশি হবে কিন্তু আব্বা তো রেগে গেলো। মাও কোনো কথা না বলে চলে গেলো। সব কিছু অগুছালো অবস্থাতেই পড়ে রইলো। এশার নামাজ শেষ করে মন খারাপ করে শুয়ে আছি, এমন সময় আব্বা আসলো।
বাবা: রহিম, খেয়েছিস? আমি: খাবো না, ক্ষুধা নেই। বাবা: আয় খেতে আয়। আমি আব্বাকে খুব ভয় পাই তাই বেশি কিছু না বলে চলে আসলাম। কিছু না বলে মুখ বুজে খাবার খেয়ে আবার চলে আসলাম। রাত প্রায় ১১টা বাজে, দেখি আব্বা ও মা দুজনেই রুমে আসলো। বাবা: কিরে আমার লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি দিবি না। আমি: তাড়াতাড়ি করে উঠে ব্যাগ থেকে বার করে বাবার হাতে দিলাম। দেখি আব্বা কাঁদছে। আমি: আব্বা আমি কি ভুল কিছু করে ফেলেছি। বাবা: না রে বাবা তুই ভুল কিছু করিস নি, আজকে সত্যি আমার নিজেকে একজন বাবা হিসেবে গর্ভবোধ হচ্ছে যে, আমি তোর মতন একটা ছেলের বাবা। আজকে আমি অনেক খু্শি যে, আমার ছেলে প্রথম রোজকারের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য ঈদের মার্কেট করেছে, সংসারের জন্য বাজার এনেছে। তুই তখন বলেছিলিস না যে, পছন্দ হইছে কিনা, সারা বাজার খুঁজলেও এগুলোর থেকে আর পছন্দের কিছু পাবি না। এগুলো আমার কাছে অনেক দামিরে। অনেক যত্ন করে রেখে দিবো। কারণ এগুলো যে আমার ছেলের প্রথম রোজকারের টাকায় কেনা। বলেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। জীবনে এই প্রথম বড় হওয়ার পর আমি বাবার বুকে মাথা দিলাম। খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো যে, আমি আজকে দুনিয়ার সব থেকে বড় সুখি মানুষ, সব চেয়ে বড় বিজয়ী। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, আসলে বাবা-মা কি জিনিস। এদের কে খুশি করতে দামি কিছু লাগে না। এরা অল্পতেই খুশি যদি সেটা দেয়া হয় ভালোবাসার সংস্পর্শ দিয়ে। সুখে থাকুক এসব মানুষগুলি যারা সারাজীবন নেয়া থেকে দেয়াটাকেই নিজের খুশি বলে ধরে নেয়।
মা-বাবাকে ভালবাসুন
একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন, এই পৃথিবীতে কেউ আপনাকে ‘কারণ’ ছাড়া ভালবাসে না। আপনি দেখতে সুন্দর ও আকর্ষনীয়- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। অনেকে আপনার চেহারার প্রশংসা করবে। আপনি খুব মেধাবী স্টুডেন্ট, আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। অনেকেই আপনাকে আরও ভালো করতে উৎসাহিত করবে। আপনি ভালো গান গাইতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনার গান শুনতে চাইবে। আপনাকে গান গেয়ে আরও বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখাবে। আপনি ভালো লিখতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনাকে বাহবা দিবে। নতুন কোনো বই অথবা পত্রিকার কলাম লিখতে উৎসাহিত করবে। অথবা ফেসবুকে আপনার পোষ্টের কমেন্ট বক্সে ভালবাসার ফুলঝুরি ফুটাবে। বিপরীত লিংগের মানুষ থেকে শুরু করে একই লিংগের মানুষগুলোও আপনাকে ভাল লাগার কথা ব্যক্ত করবে। আপনি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। কথার যাদুতে যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনি তাদের আড্ডার মধ্যমণি হয়ে থাকবেন। সবাই আপনার সাথে কথা বলতে চাইবে। প্রয়োজনে মোবাইলে ১৪ টাকায় ২৫ মিনিট কিনে নিবে। আপনি ভালো খেলেন- মানুষ আপনাকে ভালবাসবে। আপনি মাঠে নামলেই মাঠের চারপাশ থেকে দর্শকের হাততালি ও চিৎকারের ধব্বনি ভেসে আসবে। পৃথিবীতে ভালবাসাটা তাদের জন্যই বরাদ্দ, যাদের অবশ্যই কোনো না কোনো গুণ আছে। ভালোলাগার মত একটা সাইড থাকতেই হবে। অতঃপর সেই ভাললাগাটাকে কেন্দ্র করেই মানুষ তাকে ভালবাসবে। বিচিত্র কোনো এক কারণে, মানুষ একদমই সাদামাটা ও সাধারণ কাউকে ভালবাসতে পারে না। না পায় তারা আশেপাশের মানুষের ভালবাসা, না পায় তারা বিশেষ মানুষটির ভালবাসা। কেবলমাত্র নিজের মা-বাবা এবং রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলো ছাড়া। বিশেষ মানুষটির ভালবাসা সে কোনোভাবে পেয়ে গেলেও, সেই বিশেষ মানুষটি একটা সময় তাকে ছেড়ে চলে যায়, তাকে প্রতারিত হতে হয়। গভীর রাতে বালিশ জড়িয়ে কাঁদতে হয়। সেই বিশেষ মানুষটিও তাকে ‘কারণ’ ছাড়া ভালবাসেনি। সেই কারণটি ছিল স্বার্থ। যেকোনো প্রকার স্বার্থের জন্যই সে তার মত একদমই সাধারণ কাউকে ভালবেসেছিল! স্যরি ভুল বললাম, ভালবাসার অভিনয় করেছিল। যারা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের সুরে বলবে, ‘ভালবাসতে কোনো কারণ লাগেনা’ অথবা ‘আমি তোমাকে কোনো কারণ ছাড়াই ভালবাসি’ বুঝে নিয়েন, সেটি আসলে মারাত্মক রকমের মিথ্যে কথা হয়ত এটা পৃথিবীর সেরা মিথ্যা কথা।
আপনে আমি কি করছি, নিচের ঘটনাপ্রবাহ পড়ে নিন-
মা: জানিস, আজ ক’দিন ধরে পা দুইটা ফুলেছে, হালকা ব্যথা হয়। পাশের বাসার আপা বললেন, কিডনীর সমস্যা হলে নাকি এমন হয়? তোর বাবাতো ব্যস্ত মানুষ, চল্ না একটু তোকে সাথে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। ছেলে: মা, কি যে বলো! এসব কিছুই না। হাঁটাহাটি করো বেশি বেশি, ঠিক হয়ে যাবে। আর আমার সময়টাই বা কই? সারাদিন ক্লাস করে এসে কি আর এনার্জি থাকে, তুমিই বলো?? গার্লফ্রেন্ড: আজ কথা বলতে একদমই ভালো লাগছে না, শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। ছেলে: কি বলো?? কখন থেকে?? ঔষধ খাইছো?? আমাকে জানাওনি কেন?? এক্ষুণি বের হও, আমি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি! দেরি কর না, না হলে জ্বর এসে যাবে কিন্তু।
মা: আজতো তোর ছুটি, চলনা বাবা তোকে নিয়ে একটু বাজারে যাই। প্রতিটা দিন বাজারের ব্যাগ টানতে টানতে আমার কোমড়টাই ব্যথা হয়ে গেছে। আজকে তুই আর আমি একসাথে বাজার করবো। ছেলে: মা, একটা মাত্র দিন ছুটি পাইলাম, আজকের দিনটাও একটু শান্তিতে থাকতে দিবা না?? গার্লফ্রেন্ড: এই, আমার কিছু জিনিসপত্র কেনা দরকার, তুমি আসোতো, জানোইতো শপিং ব্যাগ ধরলে আমার হাত লাল হয়ে যায়। ছেলে: একদমই চিন্তা কর না, তুমি রেডি হতে হতেই দেখবা বান্দা হাজির!! মা: বাবা কতদিন তোর সাথে হাঁটতে বের হই না। যখন ছোট ছিলি তোর পিচ্চি পিচ্চি আঙুল দিয়ে আমার আঙুলগুলো শক্ত করে ধরতি, একা একা হাঁটতেই চাইতি না ভয়ে, কান্না করে দিতি মনে আছে তোর? চলনা আজ একটু হেটেঁ আসি, বেশি দূরে যাবো না, বাসার আশে পাশেই না হয় হাঁটলাম। ছেলে: মা প্লিইইইজ… আজ ভালো লাগছে না, অন্যদিন যেও। গার্লফ্রেন্ড: আজ দেখা করবা? কাছেই কোথাও? ছেলে: অবশ্যই! এটা আবার বলতে হয়? কিন্তু দূরে কোথাও যাবো। শোনো আজ তোমার হাতটা ধরে বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রতিটা অলিতে গলিতে হেঁটে বেড়াবো আর বাদাম চিবাবো!!
মা: কিরে বাবা, মাকে ভুলেই গেছিস! একটা বারও মনে হয় না মায়ের কথা! আজ দুইদিন ধরে আমার ফোন ধরিস্ না, নিজেও একটা বার কল দিস না। ছেলে: মা, আর বোলো না, যা ব্যস্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে!! আর ফোনেও টাকা নাই যে কল দিবো!! ছেলের ভালোবাসায় অন্ধ অবুঝ মা নিজের জমানো ক’টা টাকা থেকে ছেলেকে ফ্লেক্সি পাঠায়, সাথে বিকাশ করে আরো কিছু টাকা- যাতে ছেলেটা ফলফলাদি কিছু কিনে খায়। ছেলেটার যে পরীক্ষা! ফ্লেক্সি আর বিকাশে টাকা পেয়েই ছেলে খুশিতে আটখানা হয়ে মেয়েটাকে ফোন দেয়- “আজ সারারাত তোমার সাথে কথা হবে, তোমার হয়ত ফ্লেক্সি লাগবে? তাই পাঠিয়ে দিয়েছি!!! ফোনে আগেই টাকা ছিল এখন আরো বেশি, আর শোনো কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!!!” ফেইসবুকে বসেই ছেলেটা নিউজ ফিডে দেখে বন্ধুরা সবাই মাকে নিয়ে সেই সেই স্ট্যাটাস দিয়েছে। এক মূহুর্ত দেরি না করে তুফান বেগে কিবোর্ড চালিয়ে ছেলেটা লিখলো- “আজ মা দিবস!!! পৃথিবীর সব মাকে আমার সালাম!! মায়ের ভালোবাসার চাইতে আর কারো ভালোবাসার তুলনাই হয়না!! বাকি সব ভুয়া! অনলি মায়ের ভালোবাসা ইজ রিয়েল!! আই লাভ ইউ মা“
অথচ পাশের ঘরে শুয়ে থাকা জ্বরে কাতর মা ছেলেকে ডাকছে পানির জন্য। ছেলে লেখাটা পোষ্ট করেই বিরক্তিমাখা কন্ঠে চেঁচিয়ে বললো- “উফ্ আম্মু! এত ডাকাডাকি কেন করছো?? জ্বর হলেতো মানুষ চুপ থাকে, তুমি দেখি কথা বলেই যাচ্ছো!! নিজে নিয়ে খাও, আমি ব্যস্ত এখন!” কি ভাবছেন? কথাগুলো কাল্পনিক? নারে ভাই! একটু ভেবে দেখুন, ঠিকই মিলিয়ে যাবে নিজের সাথে কিংবা খুব পরিচিত কারো সাথে।
বৌ-শ্বাশুড়ীর গল্প
দ্রব্যগুণ ও টোটকা চিকিৎসা শিখতে ভিজিট করুন
ডাক্তার সাহেবের একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কয়েক মাস হল। মেয়ের স্বামী খুবই নরম মনের এবং ধার্মিক। মেয়েকে রেখেছে রানীর মতো করে। একদিন মেয়ে তার বাবার বাড়ী এসে হাজির। বাবার কাছে নালিশ করে বলল- বাবা, এ তুমি কেমন ঘরে আমার বিয়ে দিয়েছো? বাবা: কেন মা, কি হয়েছে, জামাই কি খারাপ ব্যবহার করছে? মেয়ে: তোমার জামাইতো খুবই ভাল কিন্তু সেতো দুই মাস পর পর বাড়ি আসে। সমস্যার কারণ তো আমার শ্বাশুড়ী। সারাদিন শুধু বলে, বৌমা এটা করো, বৌমা ওটা করো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেবল খিঁট খিঁট করে যান। আমার একটুও ভালো লাগে না। বাবা: মাগো, এই বয়সে মানুষ একটু এ রকমই করে। মেয়ে: না বাবা, ঐ বুড়ি যতদিন পর্যন্ত না মরছে, আমি আর ঐ বাড়িতে ফিরে যাবো না। বাবা: এই রকম কথা বলতে নেই মা। মেয়ে: তুমি তো ডাক্তার, এমন একটা কিছু ঔষধ দাও যাতে ঐ বুড়ি খুব তাড়াতাড়ি মরে যায়। বাবা: আমি হলাম ডাক্তার, মৃত্যূদূত না। এ কাজ আমি কখনো করতে পারি না। মেয়ে: বাবা তুমি কি চাও না তোমার মেয়ে সুখে সংসার করুক? বাবা একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি তার মেয়েকে বললেন, বাবা: আমি যা যা জিজ্ঞেস করব, তুই কি তার সঠিক উত্তর দিবে? মেয়ে: হ্যাঁ, সত্য ও সঠিক উত্তর দিব। বাবা: তোর স্বামীর আচার- বহার কেমন? মেয়ে: অত্যন্ত ভাল। বাবা: তোর স্বামী মানুষ হিসেবে কেমন? মেয়ে: খুবই উত্তম। বাবা: তোর স্বামী কি তোর উপর কোনো অত্যাচার করে বা অন্যায়ভাবে কোনো নির্যাতন করে? মেয়ে: অবশ্যই না। বাবা, আমি তোমাকে প্রথমেই বলেছি আমার স্বামীর কোনো সমস্যা নয়। আমার স্বামী জগতের সেরা স্বামী। আমি তাকে অনেক পছন্দ করি। বাবা: দেখ মা, তুমি যাকে পছন্দ করো সে কিন্তু মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেছে তার মায়ের সেবা-যত্নে, মায়ের শিক্ষায়। তোর স্বামী যেহেতু ভাল, আমার মনে হয় তার মা অবশ্য ভালই হবে। তুই তোর স্বামীকে পছন্দ করছ আর নিজের স্বামীর মাকে কিভাবে অপছন্দ করতে পার? যাকে ভালবাসা যায় তার মাকে কখনো ঘৃনা করা যায় না। আমার মনে হয় তুই আরো একটু সচেতন হওয়া দরকার। মেয়ে: আমি এতসব বুঝি না। আমি যা বলছি তুমি অবশ্যই তা করবে। বাবা: (একটু চিন্তা করার পর)বললেন, ঠিক আছে মা, তোর মুখের দিকে তাকিয়ে আজ আমি এই কাজ করব, তোকে আমি একটা ঔষধ দিচ্ছি। এই ঔষধটা প্রতিদিন নিয়মিত দুই ফোটা করে গরম দুধের সাথে খাওয়াবি। দেখবি এক মাসের মধ্যেই তোর শ্বাশুড়ী মারা যাবে। তবে আমাকে কথা দে, এই এক মাস তুই তোর শ্বাশুড়ীর খুব সেবা-যত্ন করবি। মেয়ে: ঠিক আছে বাবা, কথা দিলাম। মেয়ে ঔষধ নিয়ে আনন্দের সাথে শ্বশুড় বাড়ি চলে গেল। গিয়েই তার শ্বাশুড়ীকে মন দিয়ে সেবা করতে লাগলো আর নিয়মিত ঔষধ দিতে থাকলো।
পাঁচ দিন পর শ্বাশুড়ী লক্ষ্য করলেন যে, তার বৌমা আর আগের মত নেই। এখন সে আর তার কোনো কথার অবাধ্য হয় না। আগের মত আর তার উপর বিরক্ত হয় না। বরং খুব বেশি করে সেবা করছে। এভাবে ২০ দিন কেটে গেল, শ্বাশুড়ী আস্তে আস্তে বৌমাকে নিজের মেয়ের মত ভালবাসতে লাগলো। মাঝে-মধ্যে তিনি নিজে বৌমার জন্য স্পেশাল মেনু বানিয়ে খাওয়াতেন। বৌমার খোঁজ-খবর নিতেন। বৌমাকে আর আগের মত কাজের জন্য ধমকাতেন না। বরং প্রয়োজন হলে কাজটা নিজেই সেরে নিতেন। বৌমার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা না করে নিজেই চা বানিয়ে বৌমার কাছে গিয়ে বৌমার ঘুম ভাঙিয়ে তার সামনে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলতেন- বৌমা চা খাও, দেখো আমি তোমার জন্য বানিয়েছি। বৌমা: কেন মা, আপনি আমাকে ডাকতে পারতেন তো। শ্বাশুড়ী: কি যে বলো বৌমা, তুমি সারাদিন ধরে এত খেটে আমার সেবা করছো, সংসারের যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছ আর আমি এইটুকু করতে পারবো না ?? এভাবে কেটে গেল ২৭ দিন। বৌ-শ্বাশুড়ীর মনের দুরত্ব কমে গিয়ে এখন তারা মা-মেয়ের মতো সম্পর্ক। তাদের দিন যায় মহা সুখে। ২৮তম দিন। মেয়েটি তার বাবার কাছে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বলল- বাবা, তুমি আমার শ্বাশুড়ী মাকে বাঁচাও। আর মাত্র দুই দিন বাকি। আমি চাই না যে, আমার শ্বাশুড়ী আমাকে ছেড়ে চলে যাক। উনি যে ঠিক আমার মায়ের মত। বাবা: চোখের জল মুছে ফেল মা। আমি জানতাম একদিন তুই তোর ভুল ঠিকই বুঝবি। তাই আমি তোকে কোনো বিষ দিইনি। ঐ ঔষধে তোর শ্বাশুড়ীর কোনো ক্ষতিতো হবেই না বরং ঐ ঔষধ খেলে শরীরের পুষ্টি যোগাবে। যা মা সুখের সংসার কর। মেয়েটি হাঁসি মুখে বাবাকে সালাম করে বললো- আই লাভ ইউ বাবা।
গল্পগুলো সংগৃহিত ও পরিমার্জিত।